আমাদের বিজয়, আমাদের অহংকার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “আমাদের বিজয়, আমাদের অহংকার” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

patriot-1019844_1280.jpg
source

একটি মানুষের জীবনে হার জিত থাকবেই, তবুও সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এটি একটি সাধারণ কথা বা ছন্দ মনে হলেও প্রতিটি মানুষের জীবন সংক্রামের কথা এটি। একটু ভেবে দেখুন তো কোথায় প্রতিযোগীতা নেই। সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগীতা।

মাঝে মাঝে এসব প্রতিযোগীতা যুদ্ধের মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। সে হিসেবে আমরা সবাই সৈনিক। কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউবা পরোক্ষভাবে। যুদ্ধ করেই আমাদের টিকে থাকতে হয় এই পৃথিবীতে।

যেহেতু আমরা সৈনিক সেহেতু আমাদের জীবনে জয় পরাজয় থাকবেই। এটাই জীবন। কিন্তু আমরা সবসময় জয় পাওয়ার জন্য প্রানপন চেষ্টা করি।

কখনো পরাজয় মেনে নিতে চাই না। কিন্তু মাঝে মধ্যে পরাজয়ের মধ্যেও জয়ের থেকে বেশি তৃপ্তি বা স্বাদ পাওয়া যায়। যাক সেদিকে আর যাবো না।

জয় পরাজয় তো আমরা সকলেই বুঝি। তাহলে বিজয় কী জিনিস? বিজয় হলো সামগ্রিকভাবে সবকিছু জয় করা। অনেক প্রচেষ্ঠা এবং সাধনার পর প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ করে, অনেক প্রানের বিনিময়ে যা অর্জিত হয় তাই বিজয়। সেটি হতে পারে ছোট কোন ভূখন্ড কিংবা একটি দেশ।

যারা বিজয়ী হয় তারা কিন্তু প্রত্যেকজন একেকটি ইতিহাস হয়ে জাতির সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বিজয়ীরা তখন নিজেই নিজেদের ইতিহাস রচনা করে আর পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিজয়কৃত সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।

বর্তমান বিজয়ের মাস চলছে। অর্থ্যাৎ আমাদের দেশ এই ডিসেম্বর মাসেই স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো। ঊনিশশত একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আর এই যুদ্ধ হয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলো তাদের নাম এখনো ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিখা আছে। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা নতুনরা তাঁদের থেকেই শিক্ষা নিয়ে থাকি।

national-martys-4087688_1280.jpg
source

যারা তরুণ আছি তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জানি। অনেকে বই পুস্তক পড়ে জেনেছি কেউবা নানি দাদিদের মুখে গল্পে গল্পে শুনেছি। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের সেই ভাষণ শুনলে এখনো গা শিউরে ওঠে। বুকের ভেতর কেমন জানি ঢেউ খেলে যায়।

রক্ত টগবগ করতে শুরু করে। আমরা তো রেডিও টেলিভিশনে শুনে আমাদের এরকম অবস্থা হয় কিন্তু যারা সেসময় সরাসরি শুনেছিলো তাদের কী অবস্থা হয়েছিলো। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে একেকটি ইতিহাস থাকে।

এই ইতিহাসগুলো আমাদের সম্পদ। তাই এই ইতিহাস রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেউ যেন ইতিহাস বিকৃত না করে সেজন্য উপরমহলকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।

আমরা প্রত্যেকেই সেইসব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি কিংবা নাতনি। আমাদের শরীরেও তো সেই একই রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই চেতনা কই। আমাদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম কই।

আমরা তো প্রতিনিয়তই স্বদেশকে ভুলে বিদেশকে ভালোবেসে যাচ্ছি। ভুলে গেলে চলবে না আমরা সেই বীরের জাতি যারা নয় মাস প্রাণঘাতি যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছে। কথায় আছে বিজয়ের স্বাদ পাওয়া হয়তো কঠিন কিন্তু সেই বিজয় ধরে রাখা সবথেকে বেশি কঠিন।

আগে আমাদের শত্রুরা ছিলো প্রকাশ্যে, কিন্তু এখন রয়েছে গোপনে। প্রকাশ্য শত্রুর সাথে মোকাবেলা করা সহজ কিন্তু গোপন শত্রুর সাথে মোকাবেলা করা বেশ কঠিন। তাই আমরা যারা তরুন প্রজন্ম আছি তাদের কাধে কিন্তু অনেক বড় দায়িত্ব এই দেশের স্বাধীনতা, বিজয় ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার। কিন্তু আমরা কী তা করছি?

bangladesh-3561318_1280.jpg
source

আমার মতে না।
কেননা তরুন প্রজন্ম আমরা সবাই এখন ইন্টারনেট আসক্ত। সারাদিন এতটাই ইন্টারনেটে পরে থাকি যে মাঝে মধ্যে খাওয়া দাওয়া সব ভুলে যাই। দেশ নিয়ে ভাবার সময় কই আমাদের। অনেককেই জাতীয় সংগীত হয়তো বলতে বললে পুরোটা বলতে পারবে না।

পারলেও এই লাইন ঐ লাইন মিলিয়ে কিছু একটা গাইবে। তারপর আমরা অনেকেই এখনো আমাদের বিজয় দিবস কবে, স্বাধীনতা দিবস কবে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে ওলট পালট করে ফেলি।

শুধু এই দিবসগুলোতে একটু গান বাজনা করি, নাচানাচি করি আর ভালোমন্দ খেয়ে উৎযাপন করি। কিন্তু এই দিনগুলোর প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করার চেষ্টাও করি না। জাতি হিসেবে এটি বেশ ঘৃণিত একটি কাজ।

আমরা বাঙ্গালী জাতি, আমরা রক্ত দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। এই কথা আমাদের প্রতিজনের অন্তরে গেথে নিতে হবে। তাহলে হয়তো দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবো।

নচেৎ শুধু মুখে বাঙ্গালী পরিচয় থাকবে কিন্তু শরীরি ভাষায় এক বিন্দুও বাঙ্গালীয়ানা থাকবে না। অন্যরা বলবে এ শুধু নামেই বাঙ্গালী, কাজে নয়। তাই আসুন বিজয়ের এই মাসে সবাই একসাথে বলি আমাদের বিজয় আমাদের অহংকার, এই অহংকার আমকে যেকোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে।

আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
11 Comments