Steem engagement challenge-S12/W6|"The grand festival in my country."

IMG_20231011_014703.jpg
"আমার পছন্দের উৎসব দোল। বিভিন্ন বছরে কাটানো দোলের দিনের ছবি। "

Hello,

Everyone,

আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন,সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি বেশ ভালোই কেটেছে।

আজ আমি অংশগ্রহণ করতে চলেছি আমাদের কমিউনিটিতে চলমান এনগেজমেন্ট চ্যালেঞ্জ সিজন ১২ এর শেষ অর্থাৎ ষষ্ঠ সপ্তাহের কনটেস্টে। এই সপ্তাহের বিষয়বস্তু হিসেবে অ্যাডমিন ম্যাম আমাদের দেশের বিশেষ কিছু উৎসব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।

আর কিছুদিন বাদেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে চলেছে। তাই সেই উৎসবের প্রাক্কালে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে নিজের মতামত সকলের সাথে শেয়ার করার জন্য, এই কনটেস্টের থেকে আর ভালো কোনো মাধ্যম হতে পারে না।

তাই আশা করি আপনারা সকলেই শেষ সপ্তাহের এই কনটেস্টে অবশ্যই অংশগ্রহণ করবেন এবং নিজের সবথেকে ভালো লাগার উৎসব সম্পর্কে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করবেন। আসুন তাহলে আমিও আমার অনুভূতিগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি, -

What is the grand festival in your country, and how do you celebrate that festival? (Mention some rituals if you follow)

আমার দেশ ভারতবর্ষ। সকলেই জানেন ভারতবর্ষে জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই একসাথে বসবাস করে। আর সেই কারণেই প্রত্যেকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই খুব আনন্দের সহিত এখানে পালিত হয়।

IMG_20231011_014234.jpg

একদিকে দুর্গা পূজার সময় যেমন সকল বাঙালীরা আনন্দে মেতে ওঠে। অন্যদিকে ঈদের উৎসব সকল মুসলমান ভাইবোনেরা আনন্দের সাথে পালন করেন। আবার ততটাই আনন্দের সহিত শীতকালে ক্রিসমাসে খ্রীস্টানরা আনন্দের সহিত উপভোগ করেন। আবার দীপাবলীর সময় প্রত্যেকের ঘরে খুশির আলো জ্বলে। সবকিছু মিলিয়ে সারাবছর আমাদের দেশে উৎসব হয়েই থাকে।

কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই শুধু দুর্গাপূজার, কালীপুজো, লক্ষ্মী পূজা ছাড়াও বাঙালির আরো অনেক উৎসব রয়েছে, যেগুলো ধুমধামের সহিত পালিত হয়। এই প্রত্যেকটা উৎসবই আমার মনের খুব কাছের। তবে আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার সবথেকে ভালোলাগার একটি উৎসব দোল উৎসব বা হোলি উৎসব সম্পর্কে নিজের অনুভূতি।

IMG_20231011_014330.jpg

সাধারণত দোল উৎসবের পরের দিন হলি উৎসব পালিত হয়। মূলত বাঙালিরা সকলে দোল উৎসব পালন করে এবং অবাঙ্গালীদের মধ্যে ধুমধাম করে পালিত হয় হোলি উৎসব। তবে এই দুটো উৎসবই বিভিন্ন রঙের মাধ্যমে পালন করা হয়। আর এই কারণেই এই উৎসবটি আমার মনের খুব কাছের।

দোল উৎসবটি মূলত পালিত হয় শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার জন্য। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার দিন এই দোল উৎসব পালিত হয়।শোনা যায় এই দিন শ্রী রাধিকা তার সকল সখীদের সাথে বিভিন্ন রঙের আবীর নিয়ে খেলায় মেতে ছিলেন এবং বিভিন্ন রঙে রাঙা, রাধিকাকে দেখে শ্রীকৃষ্ণ তার প্রতি নিজের প্রেমকে আর গোপন রাখতে পারেননি। আর এই দিনে তিনি তার ভালোবাসার কথা রাধিকাকে জানিয়েছিলেন, তাদের সেই ভালোবাসার সাক্ষী হিসেবে সকলেই এই দোল উৎসব পালন করে থাকেন।

IMG_20231011_013933.jpg

এছাড়াও বিভিন্ন লেখক লেখিকার কবিতা, গল্পে এই রঙের উৎসব অনেক সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায়। আপনারা সকলেই জানেন শান্তিনিকেতনে এই দোল উৎসব অনেক বেশি ধুমধাম করে পালিত হয় এবং দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ সেই উৎসব উপভোগ করতে শান্তিনিকেতনে ছুটে যায়।

আমাদের বাড়িতে যেহেতু রাধা কৃষ্ণের মূর্তি আছে এবং তাদেরকে আমরা নিত্য পূজা করে থাকি, এই কারণে দোলের দিনও আমাদের বাড়ির কিছু নিয়ম রয়েছে। যেখানে দোলের দিন সকালবেলায় উপোস থেকে আমরা প্রথমে ঘরে পূজো দিয়ে নিই। যে দোলের জন্য যে আবির আনা হয় সেগুলো সবার প্রথম ঠাকুরের চরণে দেওয়া হয়।

তারপরে আমরা সেগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহার করি। এছাড়াও আমাদের বাড়িতে যে তুলসী মঞ্চ রয়েছে, সেই মঞ্চ বিভিন্ন রঙের আবির দিয়ে সাজানো হয়। আর সকলের সাথে রং খেলতে শুরু করার আগে, আমরা বাড়ির বড়দের পায়ে রঙ দিয়ে তাদের থেকে আশীর্বাদ নিয়ে থাকি।

IMG_20231011_014250.jpg

তারপর নিজেরা আনন্দ করে থাকি। দোলের আরো একটা বড় আনন্দ হচ্ছে ভাঙ্গ বা সিদ্ধি। অনেক জায়গাতে সকলে মিলে এই সিদ্ধি খাওয়ার আয়োজন করে, যার ফলে দোলের মজা আরো অনেক গুণে বেড়ে যায়। তবে যাদের সিদ্ধি খাওয়ার অভ্যাস নেই, তারা যদি পরিমাণে বেশি খেয়ে থাকেন, তাহলে কখনো কখনো তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।

দোলের সময় আমাদের বাড়িতে এই কিছু নিয়ম অবশ্যই পালন করা হয়। আমি অবশ্য এই জিনিসগুলো বিয়ের পর থেকে পালন করছি। কারণ এর আগে আমাদের বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের পুজো হতো না, তাই দোল উৎসব তেমন ভাবে নিয়ম করে পালন করা হতো না।

Would you love to go on a vacation during this festive period, or would you love to stay in your country and celebrate the festival with your family? Give the reason behind your choice.

IMG_20231011_013806.jpg

না আমি একদমই কোনো উৎসবের সময় বাইরে যেতে পছন্দ করি না। এমনকি আমি নিজে দুর্গাপূজো বা কালীপুজোতে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতেও অভ্যস্ত নই। সত্যি কথা বলতে ভীড় ঠেলে, ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে, তারপর ঠাকুর দেখার ইচ্ছে আমার ছোটবেলা থেকে কখনোই ছিল না, এখনো নেই, আর ভবিষ্যতে হবার কোনো সম্ভাবনাও নেই।

এই উৎসবের দিনগুলিতে আমি বাড়িতে আরাম করতে পছন্দ করি। নিজের মানুষের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করি। ভালো ভালো খাবার খেতে পছন্দ করি এবং রুটিন না মেনে এই কটা দিন আমি নিজের মতো করে থাকতে পারি। এই কদিন না আছে অফিসে যাওয়ার তাড়া, না আছে সকাল বেলায় উঠে রান্নার তাড়া।

হল কারণ যেহেতু এইসময় সকলের ছুটি এবং সকলেরই বাড়িতে থাকা হয়, তাই একটা অন্য ধরনের ভালো লাগা কাজ করে, যেই ভালোলাগাগুলো কখনোই পরিবারের বা দেশের বাইরে গিয়ে অনুভব করতে পারবো না। আর ঠিক এই কারণেই আমি যে কোনো ছোট বড় উৎসব, নিজের বাড়িতে, নিজের মানুষদের সাথে কাটাতে সব থেকে বেশি পছন্দ করি।

Share with us if you have any memorable moments related to the festival.

সত্যি কথা বলতে দোলের অনেক স্মৃতি আছে আমার জীবনে। কিন্তু আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার দোলের দিনে কাটানোর শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা কথা শেয়ার করব।

IMG_20231011_013626.jpg

সে বছর আমার নতুন বিয়ে হয়েছিল। আর নতুন বিয়ের পর আমার আর শুভর একসাথে কাটানো প্রথম দোল ছিল সে বছর। শশুর শাশুড়ির আমার ননদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। আর শুভ এবং বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করেছিল সে বছর সকলে মিলে ভাঙ্গ তৈরি করবে।

সেই মত আগের দিন রাতে সমস্ত জিনিস ওরা কিনে রেখেছিল। দুধ, সন্দেশ,কাজু,কিসমিস,ভাঙ্গের পাতা, মাটির গ্লাস ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

দোলের দিন সকাল বেলায় বাড়িতে পুজো সেরে শ্বশুর-শাশুড়িরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে, আমি আর শুভ পৌঁছে গেলাম শুভর বন্ধু অমিতদের বাড়ি। ওর আরো বন্ধুরা ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল। তারপর ওরা সকলের মিলে ভাঙ্গ তৈরি করার কাজে লেগে পড়লো।

IMG_20231011_013613.jpg

এরই মাঝখানে সকলে মিলে কিছুটা সময় রং ও খেলে নিলাম। সে বছর ওরা বেশ ভালো আয়োজন করেছিল। মাটির পাত্রে বিভিন্ন রঙের আবির রেখে সাজিয়েছিল। সেখান থেকে নিয়েই এক অপরকে রঙ মাখালার আমরা।

আমি আসলে আগেই শুনেছিলাম, ভাঙ্গ খেয়ে যদি কেউ কাঁদতে শুরু করে, তাহলে যে কোনো কথাতেই সে শুধু কাঁদতে থাকে। আর যদি কাউকে একবার হাসিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সে সব কথাতেই হাসতে থাকে। তখন অবশ্য সেগুলো খুব একটা বিশ্বাস হতো না।

IMG_20231011_013707.jpg

যাইহোক সেদিন সমস্ত কিছু অ্যারেজমেন্ট হয়ে যাওয়ার পরে সকলে মিলে আমরা প্রথমে এক গ্লাস করে ভাঙ্গ খেলাম। বিশ্বাস করুন এত সুন্দর স্বাদ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, কারণ ওরা কিছু দিয়েছিল ঐ ভাঙ্গের মধ্যে।

ওটা এতোটাই স্বাদ ছিল যে এক গ্লাস খাওয়ার পরে আমার মনেই হয়নি যে, আমার কোনোরকম নেশা হয়েছে। তাই আমি আরো ১ গ্লাস খেতে চাইলাম। তখন শুভ অবশ্য আমাকে বারণ করল, কিন্তু আমি ভাবলাম আমার তো নেশাই হয়নি, তাই ওর কথা না শুনে আরও এক গ্লাস খেয়ে নিলাম।

এরপর আমি যতটা মনে করতে পারি, আমি নিচে খেতে বসেছিলাম এবং সেদিন দুপুরের খাবারে আমাদের মেনু ছিল ভাত, ডাল, চিকেন আর মিষ্টি। আমার যতটা মনে পড়ে আমি শুধুমাত্র এসে খেতেই বসেছিলাম। তারপর যখন আমার জ্ঞান আসে, তখন আমি বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলাম এবং ঘড়িতে তখন রাত প্রায় তিনটে বাজে।

হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিজের ঘরে শুয়ে আছি। মাঝখানের আর কোনো কথা আমার মনে নেই। পরে অবশ্য আমি আমার ভিডিওগুলো দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ওটা আমি। সেই বছরই প্রথম এবং সেই বছরই বোধহয় শেষ আমার ভাঙ্গ খাওয়া।

আর সেদিনের তুলে রাখা আমার ভিডিও গুলো দেখে শুভর বন্ধু আজও হাসে। আজও হাসতে হাসতে আমাদের চোখে জল চলে আসে। এটা ছিলো দোলের দিনে কাঠামো আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম

Conclusion

IMG_20231011_014354.jpg

যাইহোক এই ছিলো আমার আজকের উপস্থাপন এবং আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু কথা। আশা করছি আপনাদের পড়ে ভালো লাগবে। শেষ করার আগে আমি আমার বন্ধু @yonaikerurso,@carlaisl@walictd কে আমন্ত্রণ জানাই। আশাকরছি তারাও তাদের দেশের ও তাদের প্রিয় উৎসব সম্পর্কে আমাদের সাথে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

বিভিন্ন বছরে তোলা দোলের ছবিগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কিছু কিছু ছবি আমার নিজস্ব ফোন থেকে তোলা।আবার কিছু আমার পুরনো ফোনের। আর কিছু ছবি আমি আমার হাজবেন্ডের ফোন থেকেও নিয়েছি
H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
8 Comments