স্টিমিটের সহযোদ্ধারা,
"আসসালামু আলাইকুম", আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করি আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার আজকের এই পোস্টটি পড়বেন।
আমরা মানুষ জাতি, আমরা বিবেক বুদ্ধিমান জাতি। কিন্তু আমরা আমাদের বিবেককে সামান্য কয়টা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেই। এমনকি এমনও অনেক মানুষ আছে যারা টাকার বিনিময়ে তার বুদ্ধিকে বিক্রি করে দেয়। আপনারা হয়তো বলবেন বুদ্ধি বিক্রি করছে তাতে তো ভালই হয় কিন্তু আমি এই বুদ্ধি সেই বুদ্ধির কথা বলছি না, কু বুদ্ধির কথা বলছিলাম। কুবুদ্ধি তো আপনারা সকলেই বুঝেন আসলে আমরা একজন আরেকজনকে ভালো বুদ্ধি বা পরামর্শ দিয়ে থাকি কিন্তু কিছু কিছু লোক আছে যারা মানুষের ভালো চায় না মঙ্গল চায় না সে তাকে এমনভাবে বুদ্ধি দেবে যাতে তার করার সমস্ত ভালো পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়।
এমনও অনেক শিক্ষিত বলতে পারেন উচ্চশিক্ষিত লোকও সব সময় নিজের স্বার্থটাই বোঝে অন্যের কথা একেবারে চিন্তা করেনা, চিন্তা করে না যে আমি যেরকম মানুষ আমার পাশে যারা রয়েছে তারাও তো মানুষ। কিছু কিছু সময় কিছু কিছু দৃশ্য দেখে খুব অবাক হয়ে যাই। কোথায় আছি আমরা কোথায় বাস করছি। আমরা মনে হচ্ছে যেন একজন আরেকজনকে নিচে ফেলে তার ঘাড়ে বা তার মাথার উপর পা দিয়ে কিভাবে সে উপরে উঠে যাবে এই একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা যা আসলে আমাকে খুবই ব্যথিত করে। হয়তো অনেকে বলবেন কি ব্যাপার ভাই এতো কিছু বলছে কেন, আসলে বলার অনেক কারণ রয়েছে।
তাহলে চলুন শুরু করি কেন এত কিছু বললাম আসলে গতকালকে মেয়েকে নিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আমার ছোট মেয়েটা অনেকদিন হলো মাথা ব্যাথা করছে। বারবার খালি বলছে কিছুদিন পরপরই তার মাথা ব্যাথা করছে। গাজীপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ডাক্তারের পরামর্শে চোখের ডাক্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত হলো। চোখে ডাক্তার দেখানোর জন্য একটা প্রাইভেট হসপিটালে গিয়েছিলাম, হসপিটালটির নাম হচ্ছে দেশ চক্ষু হসপিটাল। সকাল দশটার সময় গিয়ে পৌঁছেছিলাম হসপিটালের টিকেট কাউন্টারে সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল নিয়ে নিলাম। কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করিনি যে আমার সিরিয়াল নাম্বার কত, বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন ডাক পড়বে।
বিশ্বাস যদি করেন প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে বসে রয়েছি কিন্তু সিরিয়াল আর আমার আসছে না। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে কেন এত দেরি হচ্ছে আর আমার সিরিয়াল নাম্বারি কত তখন আমাকে তারা জানালো আমার সিরিয়াল নাম্বার ছিল ৩৩ কিন্তু এখনো সেই সিরিয়াল আসেনি, আরো অপেক্ষা করতে হবে। আমার তো রীতিমতো মেজাজটা গিয়েছে গরম হয়ে। আমি লক্ষ্য করেছিলাম এই সময়ের মধ্যে অনেকে পরে আসা রোগী তারা আগেই ডাক্তার দেখিয়ে কত সুন্দর ভাবে চলে যাচ্ছে দ্রুত সময়ে। বিষয়টি হচ্ছে যারা পড়ে আসছে হয়তো তারা এখানকার সিস্টেমটা জানত তাই কাউন্টারে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা দিলেই তাদেরকে সিরিয়াল আগে দিয়ে দিত এই বিষয়টা আমার জানা ছিল না।
এরপর আমি কাউন্টারে একটু রাগান্বিত হয়ে বলেছিলাম যে আপনাদের সমস্যা কোথায়, কেন আমার সিরিয়াল এত পিছনে পড়ে গেল। তখন আমি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং তাদের সাথে অনেক লাউডলি কিছুটা চিৎকার করেছি আপনারা আপনাদের নিয়মের মধ্যে কেন থাকছেন না? কেন পরে আসা রোগীগুলোকে আগে দিচ্ছেন? আর আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় রেখে দিছেন মোটামুটি আমার চিৎকারে পুরো হসপিটালের কাউন্টার এলাকা এবং পুরো আশেপাশে অন্যান্য রোগীরা তারা অপেক্ষা করছিল তারাও আমার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে রেগে গেল। এরপর হাসপাতালের কিছু লোক এসে আমাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বসতে বলল এবং কি সমস্যা হল তারা বিষয়টি দেখবে বলে আশ্বস্ত করলো।
আশ্চর্য বিষয় কি জানেন এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে সিরিয়ালে ডাকা হল। কথায় আছে না শক্তের ভক্ত নরমের যম। যেহেতু চোখের ডাক্তার দেখাতে দেখাবো তাই কিছুটা প্রসিডিওর আছে আগে চোখ পরীক্ষা করতে হবে তারপর ডাক্তার দেখাতে হবে। আমাকে প্রথমে ডেকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গিয়েছিল মেয়ের চোখে পরীক্ষা করল কিন্তু আরো কিছু পরীক্ষার কথা বলে আমাকে বসিয়ে রাখলো। বিষয়টি আমি প্রথমে খেয়াল করিনি পরীক্ষার কথা বলে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। আমি কিছুক্ষণ পরে আছ করতে পেরেছি আমার রাগান্বিত হওয়ার কারণে আমাকে এখানে অনেকটা দেরি করিয়েছে। আসলে বিষয়টা বুঝতে পারলাম যখন পরীক্ষার জন্য আমি ভিতরে মেয়েকে নিয়ে ঢুকলাম তখন ভিতরে থাকা যে পরীক্ষা করবে ওইখানকার এক ম্যাডাম তিনি পিয়ন ছেলেটির সাথে একটু চিল্লাচিল্লি করল যে এরা এত দেরি করে কেন এসেছে? কেন এরা আরো আগে আসলো না ওদের সিরিয়াল আরো আগেই ছিল।
আসলে দেখেন সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মানুষকে কি পরিমাণ মানুষ কষ্ট দেয় সিস্টেমের বাইরে কাজ করে। আসলে আমাদের বাংলাদেশ টাই কেমন জানি এমন দুর্নীতি ছাড়া কোথাও ভালো কোন পরিবেশ নেই আর সেই সাথে আমরাও মানুষগুলো এই দুর্নীতির সাথে নিজেদেরকে খাপ খেয়ে নিয়েছি এবং এটাকে আমরা খুবই স্বাভাবিক মনে করি এখন। স্বাভাবিক মনে হওয়ারই কথা যেটা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে সেটা তো স্বাভাবিকতা আসবেই, তবে আমার কাছে কেন জানি এ বিষয়গুলো খুব খারাপ লাগে। সব সময় চেষ্টা করি এগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য কিন্তু কিছু কিছু সময় আর হয়ে ওঠে না বাধ্য হয়ে এই মানুষগুলোর সাথে হাত মিলাতে হয়। যাইহোক মেয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারলাম মেয়ের চোখের পাওয়ার কিছুটা লেস হয়েছে তাকে চশমা পড়তে হবে ডাক্তারও দেখেছে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেয়ের জন্য চশমা নিতে হবে সেভাবেই লিখে দিয়েছে এবং কিছু ভিটামিন সিরাপ দিয়েছে মেয়ের জন্য যেহেতু আমার মেয়েটা কিছুটা হ্যাংলা পাতলা সেটা দেখে হয়তো ডাক্তার তাকে ভিটামিন সিরাপ দিয়েছিল। মেয়ের বিষয়টা শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো।
আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন যদিও এই সমস্যাটা বাড়তে পারে তবে এর থেকে পরিত্রানের কোন সুযোগ নেই। তারপরও সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ তাআলা তাকে সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করে। আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আজ এই পর্যন্তই। আশা করি উপরের লেখাগুলো কেন লিখেছি বিষয়টা আপনারা বুঝতে পেরেছেন আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদান্তে
@alauddinpabel
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে।