আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমি আল্লাহর রহমতে ভালই আছি। আজকের দিনটি কিভাবে কাটলো তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।
প্রতিদিনের মতো আজকেও খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করি। তারপর হাতমুখ ধুই। হাত মুখ ধুয়ে ধান কাটার শ্রমিক নেওয়ার জন্য আমাদের বাজারে চলে যাই। আমাদের বাজারে প্রতিদিন সকালে প্রায় দেড়শ থেকে ২০০ শ্রমিক একত্রিত হয়। সেখানে সবাই শ্রমিকের জন্য যায়। আমার কিছু ধান কাটার বাকি আছে সেজন্য বাজার থেকে শ্রমিক নিয়ে আসি। শ্রমিক গুলোকে সাথে নিয়ে আমার ধানের ক্ষেতের দিকে রওনা হলাম। বাজার থেকে আবার ধানের ক্ষেতে যেতে সময় লাগে প্রায় 35 থেকে 40 মিনিট। গ্রামের রাস্তা তাই হেঁটে হেঁটে শ্রমিকদের সাথে ধানের ক্ষেতে চলে গেলাম। শ্রমিক গুলোকে ধানের ক্ষেতে ধান কাটার জন্য রেখে আসলাম। আজকে ধান কাটার জন্য নয়টা শ্রমিক নিয়েছি। প্রত্যেক শ্রমিকের মূল্য ৮০০ টাকা। শ্রমিকের আমদানির উপর তাদের মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে। একেক দিন একেক রকমের শ্রমিকের মূল্য হয়ে থাকে। শ্রমিক গুলোকে ধানের ক্ষেতে রেখে বাড়িতে এসে আবারো হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেলাম। খাবার খেয়ে শ্রমিকদের জন্য খাবার নিয়ে ধানের ক্ষেতের দিকে রওনা হলাম। ভাত তরকারি একটা বড় গামলার মধ্যে রেখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে মাথায় করে নিয়ে গেলাম। ধানের ক্ষেতের পাশে একটা বাড়ি থেকে এক কলস পানি নিয়ে গেলাম। তারপর শ্রমিকদেরকে ডাকলাম খাবার জন্য। আমার ডাক শুনে শ্রমিকেরা এসে হাত ধুয়ে খাবার খেতে শুরু করলো। আমি তাদের মাঝে ভাত ও তরকারি বন্টন করে দিলাম। মাঝে মাঝে তাদেরকে কলস থেকে মগ ভর্তি করে পানি দিলাম খাবার জন্য। এভাবে তাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়ে গেল। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে শ্রমিকেরা ধান কাটতে চলে গেল। তারপরে আমি ধানের আঁটিগুলোকে একত্রিত করতে শুরু করলাম। এভাবে প্রায় দুপুর বারোটা পর্যন্ত ধানের আঁটিগুলোকে একত্রিত করলাম। ধানের আঁটিগুলো একত্রিত করার সময় আমার সাথে আমার কাকা ও ছিল। দুজনে মিলে ধানের আঁটিগুলোকে সারিবদ্ধ ভাবে রাখলাম।
ধানের আঁটিগুলোকে বাড়িতে আনার জন্য মহিষের গাড়ি আমাদের ধানের ক্ষেতে নিয়ে গেলাম। তারপর সেই ধানের আঁটিগুলোকে গাড়ির মধ্যে তুলতে শুরু করলাম। তারপর গাড়ি বোঝাই হলে গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে এসে আটিগুলোকে একপাশে নামিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পরে দুপুরে খাবার খেলাম। তারপর শ্রমিকদের জন্য খাবার নিয়ে আবারো ধানের ক্ষেতে চলে গেলাম। তারপরে শ্রমিকদের দুপুরের খাবার খাওয়ালাম। মহিষের গাড়িতে আবারো ধানের আঁটিগুলোকে বোঝাই করলাম। তারপরে আমিও বাড়িতে চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে আমি গোসল করে নিলাম। গোসল করে আমার বাড়ির সামনে ভুট্টার ক্ষেত দেখতে চলে গেলাম। এখন ভুট্টার গাছে ভুট্টার কলা ধরা শুরু করেছে। ভুট্টার ক্ষেতের চারিদিকে ঘুরে দেখলাম। ভুট্টার ক্ষেতে গরু বা অন্য পশু ভূট্রা ক্ষেতে ভুট্টা খায় কিনা তা দেখলাম। চারিদিকে ভালো করে দেখে আবার আমার বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
আসার সময় দেখি আমার চাচাতো ভাই ধানের খড় শুকিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করছে। আমার চাচাতো বড় ভাইয়ের নাম মোঃ হারিজ উদ্দিন। তার ছোট আর একটি ভাই রয়েছে। তার নাম মোঃ ইদ্রিস আলী। ইদ্রিস ভাই সৌদি প্রবাসী। তাই সংসারের যাবতীয় কাজ হারিচ ভাই ও আমার চাচা মিলে করে থাকে। এই খড় গুলোই হচ্ছে গরুর আসল খাবার। তাই এগুলোকে এই প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে একত্রিত করে রেখে দিতে হয়। হারিজ ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
যখন আমি বাড়ির কাছে আসি তখন আমার আরেক চাচার সাথে দেখা হয়ে গেল। চাচার নাম মোঃ ইমান আলী মন্ডল। চাচা সারাদিন ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই এখন ধানের বস্তা গুলোকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে ছিল। তারপর গাড়ি আসলে কিছু ধানের বস্তা তাদের সাথে ধরে আমিও গাড়িতে তুলে দিলাম। চাচার তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা সবাই মিলে ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত ছিল। এখন বস্তা গুলোকে বাড়িতে নিলে তাদের কাজ আজকের মত শেষ। কথা বলে কিছুক্ষণ পর আমি বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে আবারো হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। হাত মুখ ধুয়ে পানি খেয়ে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে নিলাম।
বিশ্রাম নিয়ে কিছু ধান সিদ্ধ করার বাকি ছিল সেগুলোকে সিদ্ধ করতে শুরু করলাম। একটা পাতিল এর মধ্যে ধান দিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিতে হয়। পানি দেওয়ার পর পাতিলের নিচে আগুন ধরিয়ে দিতে হয়। ধান সিদ্ধ করতে অনেক জ্বালানির দরকার হয়ে থাকে।
আজকের যে জ্বালানি দিয়ে ধান সিদ্ধ করছে সেটা সরিষার জ্বালানি। সরিষার গাছ থেকে সরিষা মারাই করার পর যে অবশিষ্ট গুলো থাকে সেগুলোকে একত্রিত করে রেখে দিয়েছিলাম। সেগুলো দিয়ে আজকে ধান সিদ্ধ করতেছি। ধান সিদ্ধ করতে করতে প্রায় রাত্রের ১১ টা বেজে গেল। পরে হাত মুখ ধুয়ে রাত্রের খাবার খেলাম। খাবার খেয়ে আবারো ধান সিদ্ধ করতে চলে গেলাম। ধান সিদ্ধ করতে করতে প্রায় রাত একটা বেজে গেল। ধান সিদ্ধ শেষ হলে পরে গোসল করে নিই। তারপরে ঘুমাতে চলে যায়। এই ছিল আজকের সারাদিন।
আমার পোস্ট টি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।