আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। আজকের দিনটি কেমন কাটলো তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইনশাল্লাহ।
প্রতিদিনের মতো আজকে খুব সকালে উঠি। সকালে উঠে দাঁত ব্রাশ করি। তারপর হাত মুখ ধুই। তারপর কিছু খাবার খেয়ে নিই। আজকের সকালটা খুব একটা ভালো কাটলো না। কারণ সকালে খুব ভারী বৃষ্টি হয়েছে। যা কৃষিকাজের ব্যাপক ভাবে বাধা ঘস্ত করেছে। ধান শুকানো ব্যাহত হয়েছে। এবং ধানের খড় শুকানো ব্যাহত হয়েছে। গতকালকে অনেক খড় শুকাতে দিয়েছিলাম। সে খড় গুলো জড়ো করে একত্রিত করে রাখেনি। একাধারে অনেকদিন যাবত খরা যাইতেছিল। সেজন্য শুকাতে দেওয়া খড় জমায়েত করে রাখিনি। কিন্তু আজকে সকালেই মুষলধারে বৃষ্টি হলো। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমা হয়েছে। এ পানি শুকাতে প্রায় দু-তিন দিন সময় লেগে যাবে। আর যদি আবারও বৃষ্টি হয় তাহলে আরও লম্বা সময় লাগবে। বৃষ্টি প্রশান্তির হলেও কৃষিকাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির পানি বাড়ির আশপাশের ক্ষেতগুলোর মধ্যে যেভাবে জমা হয়েছে মনে হয় বন্যার পানি এসে গেছে। এসব দেখার পর আমি আর আমার চাচাতো ভাই মোঃ শাহিনুর রহমান দুজনে মিলে চলে গেলাম মরিচের ক্ষেত এবং ভুট্টার ক্ষেত দেখার জন্য। তারপর দুজনে মিলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া শুরু করলাম। প্রথমে চাচাতো ভাইয়ের মরিচের ক্ষেত দেখলাম। তার এক একর পরিমাণ মরিচের ক্ষেত এখনো অবশিষ্ট আছে। আশপাশের অনেকেরই মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই প্রচন্ড গরমে। বৃষ্টি ধানের কাজের ব্যাহত হলেও সেচ দেওয়া ক্ষেতের জন্য উপকার হয়েছে। মরিচের ক্ষেতে সেচ দেওয়া খুব প্রয়োজন ছিল বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন আর কোন প্রকার সেচ দেওয়া লাগবে না। বৃষ্টির কারণে সেচ দেওয়ার খরচটাও বেঁচে গেল। তার এক একর জমিতে মরিচের চারা রয়েছে। এক একর জমিতে সেচ দিতে গেলে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ হয়। এবং সারাদিন ক্ষেতেই বসে থাকতে হয়। বৃষ্টি হওয়ার কারণে টাকা এবং সময় দুইটাই তার বেঁচে গেছে। আমার চাচাতো ভাই মোটামুটি খুশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে। তার মরিচের চারা থেকে মরিচ উত্তোলন করবে এক সপ্তাহ পর। তার মরিচের ক্ষেত দেখার পর আমার ভুট্টার ক্ষেত দেখতে চলে গেল।
আমার ভুট্টার ক্ষেতের ও সেচের প্রয়োজন ছিল। বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমারও সেচ দেওয়া লাগলো না। দুই ভাই মিলে ক্ষেতের চারিদিকে ঘুরে দেখলাম। চারিদিকে ঘুরে দেখে আর একটা ক্ষেত আছে আমাদের সেই ক্ষেতে চলে গেলাম। এ ক্ষেতের মধ্যে ভুট্টার বীজ পাতলা করে রোপন করা হয়েছিল। কারণ এখানে মরিচের চারা খুব ঘন ছিল। মরিচের চারা উপড়ে ফেলার আগেই ভুট্টার বীজ রোপন করি। এখন ভুট্টার চারাও রয়েছে মরিচের চারাও রয়েছে দ্বৈত ভাবে চাষ করা হচ্ছে। এখানে কিছু ভুট্টার চারা বাতাসের কারণে মাটিতে পড়ে গেছে। এগুলো দেখার পরের বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বাড়ির দিকে আসার সময় রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বড় ভাই একটা ছবি তুলে নিল। গ্রামীন তিন রাস্তার মোড় এটা। এই রাস্তা দিয়ে উত্তর দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে যাতায়াত করা হয়ে থাকে। চাচাতো ভাইয়ের পিছনের যে জমিগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো তাদেরই জমি। তাদের ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু কিছু ধান শুকাবার বাকি রয়েছে তার।
ক্ষেত গুলো দেখার পর বাড়ির কাছে একটা রাস্তার মোড়ে বসে বিশ্রাম নিতে ছিলাম। বসে থাকার সময় দেখতে পেলাম যে গতকালে ঝড়ের কারণে কিছু রান্নার ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। সেগুলোকে মেরামত করার জন্য বাঁশ কাটার জন্য কিছু লোক বাঁশ বাগানের ওখানে যাচ্ছে। তারা যে বাশ গুলো কিনেছে সেগুলোর মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। বাশ বাগান থেকে বাশ গুলো কেটে বের করার জন্য কিছু ধারালো যন্ত্রপাতির দরকার হয়। তাই তারা হাতে করে ধা কুড়াল ও করাত নিয়ে যাচ্ছে।
আজকে সকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখানে সবাই অলস বসে আছে। কারণ কারোরই কোন কাজ নেই। এখন মূলত দুইটাই কাজ ধান শুকানো এবং ধানের খড় শুকানো। বৃষ্টি হওয়ার কারণে আপাতত কারোরই কোন কাজ নেই তাই এখানে বসে সবাই আলাপ-আলোচনা করতেছে। আমিও তাদের সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করে নিলাম। কার ধান
কেমন হয়েছিল সেসব বিষয়েও আলাপ আলোচনা হলো। তারপর তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা শেষ করে বাড়ির দিকে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নিলাম। তখন বেলা প্রায় এগারোটা বাজে। তখন আকাশের মেঘ কেটেছে সূর্যরে দেখা পাওয়া যাচ্ছে।
দুপুরের দিকে রোদ উঠলেও রোদের সাথে বাতাসও ছিল। তাই এখানে আমরা অলস ভাবে শুয়ে আছি। আজকে কারো কোন কাজ না থাকার কারণে এখানেই বসে শুয়ে থাকি। আমার সাথে যে দুজন রয়েছে তার একজনের নাম আশরাফুল আলম এবং আরেকজনের নাম মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন। তাদের সাথে আমি কিছুক্ষণ খোশ গল্প করলাম । তারপর বাড়িতে এসে গোসল করলাম। দুপুর দুইটার দিকে দুপুরের খাবার খেলাম। কোন কাজ না থাকার কারণে বাড়িতেই বসে রইলাম।
কোন কাজ না থাকার কারণে আবারো সেই গাছের নিচে গিয়ে বসে রইলাম। বসে থাকতে থাকতে দেখতে পারলাম যে সেখানে একজন তার কাঁধে টিয়া পাখি নিয়ে আসতেছে। এই পাখি নাকি তার খুব শখের পাখি। তার বাড়ি আমাদের গ্রামের সামনের গ্রামে। সেই গ্রামের নাম রশিদপুর। সে এখানে কোন এক দরকারে এসেছিল। তার দরকার শেষ হওয়ার পর আবারো বাড়ির দিকে চলে যাচ্ছে। তার সাথে কিছু কথা বললাম পাখির সম্পর্কে। পরে সে চলে গেল।
সন্ধ্যার দিকে আমি আমাদের বাজারে গেলাম। সেখানে আমার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ দিদার ভাইয়ের রেফ্রিজারেটরের দোকানে গেলাম। তার সাথে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করলাম। দিদার ভাই তারা দুই ভাই ও এক বোন। ভাইয়ের মধ্যে সেই বড়। তার ছোট ভাইয়ের নাম মোঃ আপেল মাহমুদ। সে একটা সরকারি চাকরি করে। এবং দিদার ভাই একটা রেফ্রিজারেটরের দোকান দিয়েছে। সংসারের পাশাপাশি সে ব্যবসাও করে। তার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা বললাম। তারপরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। রাত ৯ টার দিকে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। রাত ৯ঃ৪০ এর দিকে রাতের খাবার খেলাম। পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নিলাম। রাত ১০:২০মিনিটের দিকে শুয়ে পড়লাম।
এই ছিল আজকে আমার সারা দিন।
আমার পোস্টটি পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ॥