শ্রীকান্ত আচার্যের এই গানটি শুনে মনে হল আমরা যারা স্টিমিটে কাজ করি আমাদের সারাদিন আমরা কখনোই বৃষ্টিকে দিতে পারব না। কারণ আমাদের ঘটনাবহুল দিনগুলো আমরা ডাইরি গেম হিসেবে লিখে ষ্টিমিট এ দিয়ে থাকি। তাই বৃষ্টিকে আমরা ফিরিয়েই দিব।
আমিঃ @hasina78
দেশঃ @bangladesh
image made by collage app
@steem4bangladesh এ আমাদের আপু ভাইয়েরা কি সুন্দর করে ডাইরি গেম দেন। আমারও প্রায় সময় ইচ্ছে হয় ডাইরি গেম লিখতে কিন্তু আমার রুটিন বাঁধা জীবনে ডাইরি গেম লিখার মত এক্সাইটিং ঘটনা কমই ঘটে। গত শনিবার ছিল ২৭ মে, আমার ছেলের ক্যাডেট কলেজের প্যারেন্টস ডে ছিল। আমাদের ইচ্ছে ছিল আমরা শুক্রবার দিন দুপুরে পাবনায় চলে যাব। সেখানে সার্কিট হাউসে আমাদের জন্য রুম বুকিং দেয়া ছিল। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড স্টেশন লিভ করার পারমিশন না পাওয়ায় আমরা শনিবার দিন ভোর সাড়ে চারটায় পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কারণ আমার ছেলের প্যারেন্টস ডে সকাল আটটা থেকে শুরু হয়।
আমরা ভোড় সাড়ে চারটায় রওনা হয়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পাবনা ক্যাডেট কলেজে পৌঁছাই।
ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা
আমাদের মত অনেক বাবা মায়েরা তাদের ছেলেদের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আটটা বাজার আগে কাউকে কলেজ ক্যাম্পাসে বাচ্চাদের সাথে মিট করার পারমিশন নেই।
বাচ্চাদের সাথে দেখা করার জন্য সবাই এগিয়ে যাচ্ছে
আমরা সবাই অনেকদিন পর আমাদের বাচ্চাদের দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই সবার বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিল আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমার ছেলে এদিন ডিউটি ক্যাডেট ছিল তাই তাকে ইউনিফর্ম পরে থাকতে হয়েছিল।
আমার ছেলে সেইদিন ডিউটি ক্যাডেট ছিল
আমরা বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেকে পাশে বসিয়ে খাবার খাওয়াছিলাম আর জিজ্ঞেস করছিলাম কলেজের বিভিন্ন কথা। আমার ছেলে তাদের কলেজের কালচারাল ইভেন্টে বেস্ট পারফরমার্স হয়েছে সে খুব খুশি হয়ে আমাকে সে প্রোগ্রামের কথা বলছিল।
আমরা সবাই খুব খুশী এতোদিন পর পুরো পরিবার একসাথে
সাড়ে দশটার দিকে প্রিন্সিপালের সাথে আমাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে গার্ডিয়ানরা তাদের বাচ্চাদের ভালোর জন্য বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।
হল রুমে আমরা প্রিন্সিপাল স্যারের জন্য অপেক্ষা করছি
বৃষ্টির কারনে আমরা আমাদের ছেলের ক্লাসেও যেয়ে কিছুক্ষণ বসি। ওদের ক্যাডেট কলেজে, ওদের জন্য নতুন হাউজ তৈরি হচ্ছে। ওরা আশা করছে কোরবানীর ঈদের বন্ধের পরে ওরা ওদের নতুন হাউজে উঠে যাবে। আমরা ওদের নতুন হাউজটা ঘুরে দেখলাম।
হাইজের দোতলার বারান্দায় ক্যাডেট হাসিব
এরই মধ্যে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেল আমরা ছেলেকে খাবার খাওয়ালাম। দুপুর ২ টায় প্যারেন্টস ডের টাইম শেষ। ছেলেকে রেখে ফিরে আসার পালা। আমার ছেলেটা এবার দশম শ্রেণীর ছাত্র তাই তাকে অনেকক্ষণ বুঝালাম যেন লেখাপড়ার দিকে একটু বেশি সময় দেয়, বেশি মনোযোগী হয়।
এবার ছেলের কাছ থেকে বিদায়ের পালা, খুব খারাপ লাগে ছেলেটাকে রেখে আসতে। আমার ছেলেটা মাশাল্লাহ অনেক ম্যাচিউর সে কখনোই বিদায় নেবার সময় কান্নাকাটি করেনা বা তার মনের কষ্টটা প্রকাশ করে না। চুপ করে মাথা নিচু করে চলে যায়। আমরা প্রতিবারই তার হাউজে ঢুকার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকি, সে মাথা নিচু করে হেঁটে হেঁটে চলে যায় কখনোই পেছন দিকে তাকায় না। আপনার আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন।
আমরা আমার বান্ধবীর বাসায় দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে, নামাজ পড়ে আবার চারটার দিকে রওনা হই।আমার বান্ধবীর বাসার সামনে খুব সুন্দর বাঙ্গি হয়েছে।তার একটা ছবি তুলে নিলাম।
সৌখিন বাঙ্গি ক্ষেত
আমার হাজব্যান্ড খুব ভালো ড্রাইভ করে। কিন্তু রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য দুদিকের চালককেই সাবধানতার সাথে যানবাহন চালাতে হয়। হঠাৎ একটা বাইক আমাদের গাড়ির সামনে চলে আসে, আমার হাজব্যান্ড তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বায়ে সরিয়ে নেয়ার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় উভয় পক্ষ। কিন্তু আমাদের গাড়ির গায়ে স্ক্র্যাচ পড়ে যায়। আমার হাজব্যান্ড বেশ মন খারাপ করে ফেলে । তখন আমি তাকে বোঝাই যে এর উসিলায় আল্লাহ হয়তো আমাদের বড় কোন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করলেন।
পথে আমরা হাটিকুমরুল নামক একটা স্থানে ব্রেক নেই। এখানে একটি বেশ পরিচিত রেস্টুরেন্ট আছে নাম "ফুড ভিলেজ", সেখানে আমরা একটু ফ্রেস হয়ে কফি পান করি।
ফুড ভিলেজে কফি পান করি
রাত আটটার দিকে আমরা বাসায় পৌছাই । বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমরা একটু আরলি ডিনার করে ফেলি। যেহেতু সারাদিন অনেক জার্নি হয়েছে তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা বেশ টায়ার্ড ছিলাম । সে কারণে আমরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরি।