Batter Life : Dhakai Muslin 🇧🇩 ১৭০ বছর পূর্বে হাড়িয়ে যাওয়া ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার ইতিহাস!

বাংলার ইতিহাসে ঢাকায় মুসলিম বলতে মোঘল আমলের ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উৎপাদিত সুক্ষ কাপড়কে বোঝানো হতো। যা ১৭ শতকের বিকাশ লাভ করেছিল। বাংলার গর্ব এই মুসলিমের আকর্ষণীয় এবং রুচির সিদ্ধ নামের আড়ালে রাজকীয় অভিজাতের সাদ পাওয়া যায়। ঢাকাই মসলিনের বুনন শৈলী অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ডিজাইন ছিল নান্দনিকতা। প্রাচীন ও মধ্যযুগের গোটা এশিয়ার মধ্যে তখন ঢাকা ছিল বয়ান শিল্পের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। সোনারগায়ে ঘিরে গড়ে উঠেছিল মুসলিম শিল্পীর পল্লী। এই এলাকার বয়ন শিল্পীদের হাতে তৈরি হতো ভবন মোহিনী। প্রায় স্পর্শ তাদের অকল্পনীয় মিহি সুতার সূক্ষ্ম বস্ত্র ঢাকাই মুসলিম অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন বাহারি রং মনোলোক কারুকার্য পন্ডিত ও বস্ত্র সারা বিশ্বের বিপুল আলোড়ন তুলেছিল। বিশ্বের সম্রাট, মস্রাঙ্গীনি অভিজাত্য আকাঙ্ক্ষার ধন পথিক হয়ে উঠেছিল ঢাকায় মুসলিম। মুসলিম শিল্পের পূর্ণ সৃষ্টিশীল কাজ বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত পর্যটকদের বাংলার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। ঐতিহাসিকদের মতে আনুমানিক ১৫৫০ সালে অষ্কিত দ্যা বেরস এর মানচিত্রে সর্বপ্রথম ঢাকার নামের উল্লেখ্য পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেছেন ঢাকার ইতিহাস ৪০০ বছরের বেশি পুরনো নয়। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় ১৬১০ সালে বাংলার সুবাদার ইসলাম খান চিশতি রাজমহল থেকে বাংলার রাজধানী ঢাকা স্থানান্তরিত করার পর থেকে ঢাকার ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সুতরাং ঢাকাই মুসলিনের উল্লেখ্য মোগল আমলের আগেই পাওয়া যায় না। তাছাড়াও Texpadia থেকে জানা যায় ১৬৭০ সালের সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে মুসলিম কাপড় ব্যবহৃত হয়।
১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট কোম্পানি কর্তৃ ১৮.৫০ লক্ষ ঢাকায় মুসলিম রপ্তানি করা হয়েছিল। ১৮৪০ সালে প্রকাশিত ঢাকায় ইংরেজি বাণিজ্য বিষয়ক কর্মচারীর জেমস টেলার তার এক গ্রন্থে A sketch of the topography and Statistics of dacca বলেন ১৭৯৮ সাল থেকে সোনার গায়ে হতে প্রতি বছরে প্রায় তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার ঢাকায় মুসলিম রপ্তানি করা হতো। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৩.৫ লক্ষ টাকা মূল্যে ঢাকায় মুসলিম ইউরোপের রপ্তানি করা হয়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে ঢাকায় মুসলিম রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়কার ইউরোপীয় লেখকদের বিবরণে ঢাকায় মুসলিম শিল্পের অবনতি ঘটে এবং উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ঢাকায় মুসলিম শিল্প একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায় । ১৮৫১ সালে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী great Exihibition অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা জেলার তাঁত শিল্পে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ঢাকাস্থ ইংরেজ বাণিজ্য বিষয়ক কর্মচারী জেমস টেইলার নিজের চোখে দেখেন মোঘলদের শক্তির পতন, ব্রিটিশ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য বিস্তার , ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব, ঢাকাই মসলিনের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করার ইত্যাদির কারণে ঢাকায় মসলির কাপড়ের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সে সাথে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকায় মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাসের উৎপাদন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি সংস্কৃতির আভিজাত্য সিদ্ধ করার লক্ষে ঢাকায় মুসলিম পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখতেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ১২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখ বস্ত্র ও পার্ট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন কালে। ১৭০ বছরের পূর্বে হারিয়ে যাওয়া ঢাকায় মুসলিম তৈরীর প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এক ঐতিহাসিক নির্দেশনা প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য বিখ্যাত মুসলিম তৈরীর প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড হতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় উল্লেখ্যযোগ্য কার্যক্রম সমূহ হচ্ছে সম্ভবতা যাচাই, জাতীয় সেমিনার আয়োজন , মসলিন প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন, দায়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি।

পরবর্তীতে বস্ত্র পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২৭ শে জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে প্রজ্ঞাপন মূল্যে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বি টি এম সি, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিনিধি সমন্বয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় কো-অফ সদস্য সহ ১১ জন সদস্য ঢাকায় মুসলিম পুনরোদ্ধারে গবেষণার কাজে সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন।

২০১৬ সালে জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের রাজস্ব বাজেটের আওতায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে একই বছরে গবেষণা খাত উন্মুক্ত করনের সহ ৩৫ লক্ষ টাকা বাজেটের বরাদ্দের মাধ্যমে পুরো দম শুরু হয় গবেষণার কার্যক্রম পরবর্তী বাংলাদেশ কর্তৃক ১২১০ লক্ষ টাকা Revivng the Technology of Muslin Yarn and Muslin Fabric The Golden Heritage of Bsngladesh. শীষর্ক প্রকপ্লটি গ্রহন করা হয়। যা মাননীয় পরিকল্পন মন্ত্রী কর্তৃক গত ১২.০৬..২০১৮ তারিখ অনুমোদিত হয়। ১৭০ বছর পূর্বে হাড়িয়ে যাওয়া ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের কাজটি অত্যান্ত জটিল এবং কঠিন কাজ ছিলো। যা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সে কাজটি করেছিলো।

✴️কার্যপ্রণালী ✴️
ফুটি কার্পাস থেকে প্রথমে প্রাথমিক অবস্থায় তুলা সংগ্রহ করা হয়।

এই তোলা কি বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে,। সূক্ষ্ম মিহি সুতার রূপান্তরিত করা হয়। যা ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ করা হয়।। নিম্নে প্রসেস ফ্লো চার্ট দেখানো হলো।
সুতা মাড়করণ➡️ সতা নাটান ➡️টানা হোতান ➡️ সানা বাঁধা ➡️ টানা সুতা বিন্যাস্ত করা ও বিমে জড়ানো ➡️ব বাঁধা ➡️নারদ বাঁধা ➡️ঢাকাই মসলিন

অতঃপর এটাকে মার প্রকরণ করা হয়, তারপর নাটাই এর মধ্যে সুতাকে জড়ানো হয়।এর পরে খুবেই সুক্ষ দক্ষতার সাথে কাপড় তৈরি করা হয়।

কাপড় তৈরিকরন প্রক্রিয়া কোনভাবেই মেশিনের সম্ভব নয়। মসলিন এর তাৎপর্য হলো এ কাপড় কোনভাবে মেশিনে তৈরি করা সম্ভব না। এজন্যই মসলিন কাপড় তৈরি করতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন সময় লাগে ১২ হাত কাপর তৈরি করতে।

কনজাম্পশন :
মসলিন সুতা ৩৫০ থেকে ৭০০ ইংলিশ কটন কাউন্ট তৈরি করা যায়। তবে বাংলাদেশে সাধারনত ৩০০ থেকে ৩৫০ ইংলিশ কটন কাউন্ট হয়ে থাকে। মসলিন কাপড় শুধুমাত্র হাতের সাহায্য তৈরিন করা হয়।