লিখছি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে
আসসালামু আলাইকুম
সকলেই কেমন আছেন? আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ভালো আছি। বন্ধুরা, আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম কমিউনিটি @steem4bangladesh, যার অধিনে আমরা কাজ করি। যেই কমিউনিটির এডমিন মহোদয় ও মডারেটরদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের ক্রিয়েটিভি শিখে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। তারা আমাদের জন্য এনগেজমেন্ট সিজন ১০ সপ্তাহ ০৪ এর জন্য সুন্দর একটি টপিক নিয়ে এসেছেন। য়ার নাম হলো SEC-S10W4 : A Terrible day of my life এই টপিকের উপর যথাসাধ্য অনুযায়ী আমার ক্রিয়েটিভি প্রকাশ করার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ।
আমি যে আমার সাথে ঘটে যাওয়ার ভয়ংকর ঘটনাটি বলবো সেটা কোনো ভৌতিক বা জীবজন্তুর ঘটনা নয়। সত্যি বলতে গেলে আমার জীবনে আহামরি কোনো ভয়ংকর দিন নাই বললেই চলে। তবে ভয়ংকর বলতে আমার একটি ভয় ভিতি বা সংশয়ের একটা দিনের বিষয়ের ঘটনাটি শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ।
দিনটি ছিলো ইংরেজি ২০১৮ সালের জুন মাসের ২১ তারিখ। আরবী শাউয়াল মাসের ৭ তারিখ। ঈদুল ফিতরের ৭ দিন পর। যখন আমি ঢাকায় "মারকাজুল হুদা আল ইসলামি বাংলাদেশ ঢাকা" মাদ্রাসায় ভর্তি হই সেদিনের একটি ঘটনা। যা সারাজীবন ভয়ংকর দিন হিসেবে স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
আমি ঢাকাতে প্রথম যাতায়াত করেছিলাম। মাদ্রাসায় পড়াশোনার তাগিদে মা বাবার বুক থেকে বহুদুরে পড়ার জন্য গিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ১৮ বসর বয়স রানিং। যাইহোক আমি সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা গামী পথে এস আই এন্টারপ্রাইজ বাসে আরোহন করতেছিলাম। বুকে ধুক ধুক করছিলো, কারন জীবনে এই প্রথম বড়ো বাসে করে এতদুর জার্নি।
যাইহোক আমি সেই বাসে করে দীর্ঘ সময়ের পর ঢাকায় পৌঁছে গেলাম। সেখান থেকে মাদ্রাসায় পৌছাতে হলে আমাকে একটা সিএনজির সাহায্য নিতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই সিএনজি যে আমার জন্য ভয়ংকর আকার ধারণ করবে সেটা তো আদৌ জানা ছিলো না। সি এন জি ড্রাইভারকে ঠিকানা বলে দিয়ে আমি উঠলাম। উঠার পর থেকে যেখানে যেতে আমার জানামতে ৩০ লাগবে। সেখানে যেতে আমার ১ ঘন্টা ছুই ছুই অবস্থা।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতে যে আপনি চুপ করে বসে থাকেন আপনাকে আপনার ঠিকানায় পৌছে দিলেই হবে। এদিকে আমি ঢাকাতে প্রথম। এমনিতেই ভয়ে ভয়ে আছি। নতুন জায়গা নতুন মানুষজন। কত মানুষের থেকে শুনেছি যে ঢাকায় নাকি চিটার বাটপারে ভরপুর। এসব ভাবতে ভাবতে গলা শুকিয়ে গেছিলো।
বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখতে পেলাম একটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছিলো, আমি জানিনা সেটা কোথাকার জায়গা। একটু পর গিয়ে একটা জায়গায় গাড়িটা থামালো, তারপর কয়েকজন লোক আসলো। তারপর আমাকে তারা বললো যে কী করি, বাসা কই, ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাইলো। আমার ভয়ের কাঁপুনি দেখে তারা বললো ভয়ের কিছুই নেই। আমরাও মানুষ।
তারপর তারা আমাকে একটা কী যেন একটা রুমাল দিয়ে আমার মুখে চেপে ধরলো। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর তারা কী করলো আমার জানা নাই। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর আমি জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পেলাম আমি একটা মসজিদে শুয়ে আছি। এবং পাশে কয়েকজন হুজুরকে দেখতে পেলাম। তাখন তারা আমাকে বিস্তারিত জানালো যে,
আপনাকে আমরা রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছিলাম। আর আপনার কাছে কোনকিছু পাওয়া যায় নি। তখন আমি সত্যিই হতবাক। তখন আমার জীবনের চেয়েও বেশি দামী ছিলো আমার ভর্তি হওয়ার টাকা আর কিছু ডকুমেন্টস। আবার কাপর-চোপর ছিলো। সেটার জন্য আমি তখন খুব কাঁদছিলাম। বাড়িতে বিষয়টা না জানিয়েও পারছিলাম না। কারন টাকা পয়সার জন্য তো অবশ্যই মা বাবা ছারা কেউ পাশে থাকবে না।
তাই আমি আমার বাড়িতে জানলাম বিষয়টা। তারাও শুনে অনেক ভয় পেয়েছিলো এবং শুকরিয়া আদায় করেছিলো যে আমার কোন বড় ক্ষতি হয়নি। তারপর তারা আমার জন্য টাকা পাঠালো ভর্তি ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। এই সেই আমার ভয়ংকর দিনটি ছিলো যা আমার জন্য অবিস্মরণীয়।
এমন ঘটনা আমার সাথে আর কখনো ঘটেনি। আর আমার সাথে এই ঘটনা না ঘটলেও দেশে অনেকের সাথে অহরহ ঘটছে। তাই আমি নিজেকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা পেয়ে সব সময় এটা থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করি। নতুন কোন জায়গায় গেলে আমি কখনো একা একা যাইনা। আর গেলেও সব সময় দোয়া পড়ি।
আল্লাহর শানে নিজেকে পরিপূর্ণ সোপর্দ করি। যেন আল্লাহই আমার জীবনকে সকল ভয় ভিতি ও বিপদ থেকে মুক্ত রাখেন।এমন কিছু ভয়ংকর সময় গুলোকে মনে পড়লে আপনাআপনিই বুক কেঁপে ওঠে। সেইদিনটি কেমন ছিলো। কী ঘটেছিলো আমার সাথে। এমন কিছু মুহুর্তের কথা ভাবলেও শরীরের শিরা-উপশিরা ও পশম দাঁড়িয়ে পরে।
প্রথমেই আমি যে শিক্ষা পেয়েছিলো তা হলো আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল। আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা ও আল্লাহর নাম নিয়ে পথ চলা শুরু করা। দোয়া দরুদ পড়ে যেকোন কাজ বা ভ্রমণ করা৷ এবং একাকী এতদুরে বা অচেনা জায়গায় না যাওয়া। এবং মা বাবার থেকে দোয়া নেওয়া।
আমিও সবাইকে এই একই পরামর্শ দেবো যা আমি এখান থেকে শিক্ষা পেয়েছি। সকল কাজই আল্লাহর উপর ন্যস্ত করেই আমাদের সামনে অগ্রসর হওয়া দরকার। সকল বিধান মেনেই আল্লাহ তায়ালাকে রাজি খুশি করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালাও আমার বিপদে পাশে থাকবেন। সকল মসিবত দুর করবেন ইনশাআল্লাহ।
এই ঘটনা আমাদের কী শিক্ষা দেয়.? এই ঘটানাটি আমাদের জীবনকে বিপদ আপত থেকে রক্ষা করতে পারে। এই ঘটনাটি আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি আমার লেখা পড়নেওয়ালা ব্যাক্তিকেও সেই শিক্ষা দিয়েছে ( পাঠক ব্যাক্তি)। তাই সকলের উচিত আমাদের সেই শিক্ষা মতাবেক চলা ও সাবধানতা অবলম্বন করা। পরিশেষে আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য কয়েকজন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাবো, যাদের কিছু ঘটনা শোনার জন্য আমি উদ্রেক। তারা হলেন: @mdkamran99, @aparajitoalamin এবং @rubina203 কে।