সনাতন ধর্মের সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য বিয়ে।

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন। আরও একটি নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে কিছু একটা লেখার জন্য উপস্থিত হয়েছি। সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। আমাদের বাঙালি জাতির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অনেক পুরাতন। ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতি একদম ব্যতিক্রম। পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলা বাংলাদেশ সব মিলে বাঙালি জাতির ঐতিহ্য সবসময় একটু ব্যতিক্রম ছিল।বাঙ্গালীদের খাবারের তালিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উৎসব পৃথিবীর অন্যান্য সাম্প্রদায়ের চেয়ে ব্যতিক্রম। এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনো পর্যন্ত বাঙালি সংস্কৃতির একটা বড় অংশ হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে। যদিও বা বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ কিন্তু বাঙ্গালীদের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখার একটা উৎস হচ্ছে বিবাহের অনুষ্ঠান। ইসলাম ধর্ম কিংবা মুসলিমদের বিয়ে সবসময় খুবই সাধারণ এবং সিম্পল ভাবে করার একটা রীতি সেই আদিম যুগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কিন্তু উদযাপন আমরা সবাই একত্রে বসবাস করা শুরু করেছি তখন বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে উৎসব এবং ঘটা করে বিয়ের আয়োজন মুসলিমদের মধ্যে প্রকাশ করেছে। আজকে একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বিয়ে সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

20230417_113907.jpg

20230417_113126.jpg

Cox's BazarLocation Map

স্কুল এবং কলেজ জীবন পার করেছি অনেক বন্ধুবান্ধব সমন্বয়ে। বিশেষ করে কলেজ জীবনে পদার্পণ করার পর আমার অনেক বন্ধু তৈরি হয়েছে যার মধ্যে অধিকাংশ মেয়ে। আমার মেয়ে বান্ধবী গুলোর মধ্যে আবার বেশিরভাগ জন হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বী। সনাতন ধর্মের বান্ধবী হওয়ার কারণে তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পারিবারিক আয়োজনে তাদের বাসায় গিয়ে কাছ থেকে তাদের সংস্কৃতি টা দেখার সুযোগ হয়েছে। কিছুদিন আগে আমার এক বান্ধবীর বড় বোনের বিবাহ অনুষ্ঠান হয়েছে কক্সবাজার এলাকায়। আপনাদেরকে আগেই বলেছি হিন্দু ধর্মের বিবাহটা বিরাট একটা আয়োজন করে করা হয়।।যেহেতু আমার সঙ্গে বন্ধুদের পরিবারের খুবই একটা ভালো সম্পর্ক আছে তাই বিবাহতে অংশগ্রহণ করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে চলে এসেছিলাম। আর তাছাড়া কক্সবাজার আমার একটা প্রিয় শহর এখানে কোন একটা অনুষ্ঠান হলে সেটা মিস করার চেষ্টা করি না। কক্সবাজার রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের ক্লাবে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমেই চলে জামাই বরণ করার পর্ব।

20230417_113334.jpg

Cox's BazarLocation Map

জামাইকে বরণ করার জন্য সাধারণত কনের ছোট বোনেরা এবং বান্ধবীরা উপস্থিত থাকে সুন্দর করে ডিজাইন করা গেইটের পাশে। আর জামাইবাবু তার বন্ধুর সহ সবাইকে একসাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশ্যই গেটের পাশে যেহেতু দাঁড়িয়ে আছে তারা কিছু টাকা-পয়সা না নিয়ে জামাইবাবুকে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। এই রিদিতা বর্তমানে আমাদের মুসলিমদের মধ্যেও আছে আমরা সবাই এই বিষয়টা খুবই উপভোগ করি। অবশেষে জামায় বাবু হাজার খানেক টাকা শালীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেটে ঢোকার অনুমতি পায়। হিন্দুদের বিয়ের অনুষ্ঠান চলে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা পর্যন্ত। সুন্দর করে ডেকোরেশন করা মণ্ডপের মাঝে সর্বপ্রথম জামাইবাবুকে বসানো হয়। এরপর পুরোহিত বিভিন্ন মন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় ঘন্টাখানে বিভিন্ন বিষয় থাকে পাড়ায়। এই যে দীর্ঘ কোন সময় অতিক্রম হয় এই সময়টার মধ্যে কিছু বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছিল। দুটো ছোট ছোট্ট কিউট বাচ্চা মেয়ের দারুন ভাবে নেচে আমাদেরকে বিনোদন দিল। বিনোদন উপভোগ করে আমরা সবাই ফিরে গেলাম বিবাহের মন্ডপে কিভাবে বিয়ে অনুষ্ঠান টা আয়োজিত হচ্ছে সেটা দেখার জন্য।

20230417_113818.jpg

20230417_113835.jpg

Cox's BazarLocation Map

বিয়ের অনুষ্ঠানের মণ্ডপে সর্বপ্রথম যে বিষয়টা হয় সেটা হচ্ছে শুভদৃষ্টি। প্রথম মেয়ের জামাইবাবুকে মণ্ডপ এর ভিতরে রেখে অনেকক্ষণ বিভিন্ন মন্ত্র পড়ানোর পর নিয়ে আসা হয় কনেকে।কনের চেহারাটা পান পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং তাকে বরের চারপাশে কয়েকবার ঘুরানো হয়।এরপর যাহারা থেকে পাতা সরিয়ে কনের সুন্দর মুখটা দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয় জামাইবাবুকে । বিবাহিত এবং অবিবাহিত সবাই এই দৃশ্যটা খুবই উপভোগ করে। এইভাবে ট্র্যাডিশন আকারে এই বিবাহ হয়ে আসছে বছরের পর বছর। হিন্দু ধর্মের এই বিবাহ পদ্ধতি হাজার বছর পুরনো। বছরের পর বছর বংশ-পরম্পরায় এই পদ্ধতি তারা বহন করে চলছে। ইসলাম ধর্মের যেমন কবুল বললেই বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে যায় হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে পুরোটাই ব্যতিক্রম। পরিবারের প্রত্যেক অভিভাবককে সমন্বয়ে করে বিভিন্ন রকমের মন্ত্রের মাধ্যমে পুরোহিত কন্যাকে বরের হাতে তুলে দেয়।

20230417_113145.jpg

Cox's BazarLocation Map

বিয়ের অন্যতম একটা মুহূর্ত হচ্ছে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া। সর্বশেষ ধাপ হিসাবে সিঁদুর পড়ানো হয় কনের সিথিতে।এর আগে সাতপাকে ঘোরানো হয় । আগুনের চারপাশে প্রত্যেকবার ঘোরানোর সময় একটা করে ওয়াদা করা হ। এইভাবে সাত পাকে ঘোরার মাধ্যমে সাতটা ও আধা সম্পন্ন হয় । সাত পাকে ঘোরা সম্পন্ন হওয়ার পর যখন কনের সিতিতে সিঁদুর দেওয়া হয় তখন মন্ডপের বিবাহ অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়। মণ্ডপের বিবাহ অনুষ্ঠান শেষ করার পর আবার বিশেষ এক ধরনের খেলার আয়োজন করা হয় বর এবং অনেকে নিয়ে। এই খেলাটা দেখতে দারুণ লাগে বাচ্চাদের রান্না-বাটি খেলার মত। বিষয়টা দেখতে খুব মজার বড় বড় দুইটা মানুষ বাচ্চাদের মতো রান্নাবাটি খেলছে। এই রান্না বাটি খেলার মধ্যে একে অপরের সঙ্গে ভালো একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। এরপর দুধের বাটি থেকে আংটি সংগ্রহ করা একে অপরকে কড়ি দিয়ে ভাগাভাগি করে নেওয়া ইত্যাদি এই খেলার অংশ। পরিপূর্ণভাবে হিন্দু সংস্কৃতির এই বিবাহটা আপনারা যদি না দেখেন তাহলে এই সংস্কৃতি টা আপনারা উপভোগ করতে পারবেন না।

20230417_113228.jpg

Cox's BazarLocation Map

প্রত্যেকটা বিবাহের সবচাইতে দুঃখের সময় হচ্ছে বিদায় বেলা। একটা কন্যাকে যখন আপনি ২০ বছর ২৫ বছর ৩০ বছর পর্যন্ত আপনার পরিবারে লালন পালন করার পর সারা জীবনের জন্য অন্য একজনের হাতে তুলে দিবেন সেই কষ্ট একজন বাবা-মা ছাড়া কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। একজন ভাই জানে বোনকে একেবারে অন্য জনের কাছে দিয়ে দেওয়া কতটা কষ্টকর এবং একজন বোন এই কষ্টটা বোঝে। বছরের পর বছর সমন্বয় করতে করতে আমরা এই কষ্টটাকে ভুলে যায় কিন্তু বিয়ের দিনের মুহূর্তের সময় আমরা আমাদের কষ্টটাকে ধরে রাখতে পারি না। বিয়ে সব সময় পবিত্র একটা বিষয় প্রত্যেক ধর্মের ক্ষেত্রে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেকটা ধর্মের সংস্কৃতি এবং নিয়ম-নীতি আমাদের সম্মান করা উচিত তবেই আমরা মানুষ হিসেবে উৎকৃষ্ট হতে পারব।

20230417_113315.jpg

Cox's BazarLocation Map

ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য।
আরও একটি নতুন লেখা নিয়ে পুনরায় আপনাদের মাঝে উপস্থিত হব ইনশাল্লাহ ।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now