এ পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন একে অপরের সঙ্গে জড়িত ।
একে অপরের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া পৃথিবী কল্পনা করা যায় না।
প্রত্যেকটা মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
কারণ একজন মানুষের পক্ষে সব ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়।
তাই বিভিন্ন রকমের মানুষ এ সমাজে বসবাস করে এবং একে অপরের সাথে সমন্বয় করে কাজ পরিচালনা করে।
কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন কথা হয় লেনদেন হয় সম্পর্ক তৈরি হয়।
আর এই সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের জীবন অতিক্রম করি।
একজন অপরিচিত ব্যক্তি সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে তার সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
নিজের ভাইয়ের মত এভাবে এই পৃথিবী কালের পর কাল অতিক্রম হয়ে আসছে।
সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বাস এবং কথা দিয়ে কথা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষ আজকে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে একে অপরকে।
আপনি যাকে বিশ্বাস করেছেন সেই ব্যক্তিটাই আজ আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে।
কথা দিয়ে কথা না রাখা কিংবা ওয়াদা রক্ষা না করাটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
কিন্তু কেন যেন আমাদের সমাজে এই কথাটা মনে হয় মানুষ ভুলে গিয়েছে ।
বিভিন্ন জনের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা কোন না কোন ব্যক্তির কাছে ধোঁকা খেয়েছে।
খুব কাছের কোন ব্যক্তি অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গড়িমুশি করেছে কিংবা ওয়াদার খেলাফ করেছে বা বড় কোন ক্ষতি করেছে ।
ব্যক্তিগুলো হয়তো বা মনে করে যে একজন ব্যক্তিকে বোকা বানিয়ে আমি জিতে গেলাম ।
তার কাছ থেকে যতটুকু অর্জন করা দরকার আমি সেইটা অর্জন করতে পেরেছি।
কিন্তু সে হয়তোবা এ বিষয়টা চিন্তা করা না একজন ব্যক্তিকে ধোকা দেওয়ার ফলে সে কতটুকু অপরাধী হয়ে গেল ।
কেয়ামতের ময়দানে হয়তো বা কঠিন জবাবদিহীতার শিকার হতে হবে তাকে এবং যেটা থেকে হয়তোবা সে পার পাবে না ।
কথা দিয়ে কথা রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি।
যে কাজটা আপনি করতে পারবেন না কিংবা যেটা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে প্রসঙ্গে কখনোই কাউকে কোন কথা দিবেন না ।
যখন আপনি নিশ্চিত হবেন যে এই কাজটা আপনার পক্ষে করা সম্ভব এবং এটা আপনি করে দিতে পারবেন তখনই কোন ব্যক্তিকে সেই বিষয়ে কথা বলবেন বা সেই বিষয় কেন্দ্রিক লেনদেন করবেন ।
যদি কোন কাজ আপনার পক্ষে সম্ভব না হয় কিংবা আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হয় তাহলে সে বিষয়ে কখনো কাউকে ওয়াদা কিংবা কথা দিবেন না ।
কারণ একজন ব্যক্তি আপনার ওপর কঠিন বিশ্বাস রেখে একটি কাজের দায়িত্ব আপনাকে দিয়েছে আর আপনি যদি সেই কাজটি ঠিক মত করতে না পারেন তাহলে সেই ব্যক্তির কাছে আপনি অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন এবং সেই ব্যক্তি টাও ক্ষতিগ্রস্ত হলো ।
অর্থাৎ আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা ভুল কাজের জন্য আপনারা দুজনই ক্ষতিগ্রস্ত।
একদিকে আপনি তার কাছে অপরাধী এবং সেও অর্থনৈতিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
ওয়াদা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
কোন কাজ সেটা ছোট হোক কিংবা বড় হোক যখন কখনো কোন জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে ওয়াদা করবেন কিংবা কোন কাজ করার ব্যাপারে ওয়াদা করবেন তখন সেটাকে অবশ্যই করতে চেষ্টা করবেন।
কোন কারনে যদি একই সময়ে দুটি কাজ চলে আসে তাহলে অবশ্যই যে কোন একজনকে আপনি জানিয়ে দিবেন যে আপনার পক্ষে আজকে সেই কাজটি করা সম্ভব নয় ।
আমরা অনেক সময় ছোটখাটো ভুলগুলো করে তাকি।
যেমন একজন ব্যক্তিকে কোন এক জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে ওয়াদা করার পর একই সময়ে অন্য একটি কাজ পড়ে গেলে আমরা দ্বিতীয় কাজটি প্রাধান্য দেই এবং প্রথমজনকে কোন বিষয়ে অবগত করি না।
অপরদিকে প্রথম ব্যক্তি আমার জন্য অপেক্ষা করবে কিংবা সে আমাকে নিয়ে এক একটা নির্ধারিত কাজে যাওয়ার পরিকল্পনা করে বসেছে কিন্তু আমি তাকে বিষয়টা না জানিয়ে অন্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে ফেললাম এবং তাকে বিষয়টা অবগত করলাম না এক্ষেত্রে কিন্তু আমার ব্যাপারে তার আস্থা হারিয়ে গেল।
সে কিন্তু দ্বিতীয়বার আমাকে আর বিশ্বাস করবে না কিংবা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।
তাই আপনারা কখনো যদি কোন ব্যক্তিকে ওয়াদা করে থাকেন নির্ধারিত কোন জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে।
তাহলে কোন কারণে যদি আপনারা সেখানে যেতে না পারেন অবশ্যই ব্যক্তিটিকে অবগত করবেন যে আপনার পক্ষে আজকে সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।আপনার জন্য তার আস্থা ঠিক থাকবে এবং আপনাকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে সে সব সময় সম্মান করবে ।
সুতরাং আমি আপনাদেরকে এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে আমাদের প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে ওয়াদা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
তাই ছোট হোক কিংবা বড় হোক আমরা যখনই কোন ওয়াদা কিংবা কাউকে কথা দিব সেটা অবশ্যই রক্ষা করব ।
মনে রাখবেন মহান আল্লাহ ওয়াদা রক্ষাকারীকে পছন্দ করেন ।আমাদের রাসূল ও কথা দিয়ে কথা রাখতেন।
আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না কথার খেলাপ করে ওয়াদা পালন করে না তাকে সরাসরি আল্লাহ মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং মুনাফিকের অবস্থান অবশ্যই জাহান্নাম ।
সুতরাং আসুন আমরা নিজেদের এই ছোটখাটো ভুলগুলোকে শুধরে নিই এবং একজন মুমিন মুসলিম হিসেবে এই পৃথিবীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করি।
ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর কাছে সন্তুষ্ট ভাজন হয়ে উপস্থিত হতে পারব ।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ।
আরো একটি নতুন লেখা নিয়ে পুনরায় আপনাদের সামনে উপস্থিত হব ।
ইনশাআল্লাহ