Contest - My Favourite Superhero // আমার বাবা। প্রতিযোগিতায় আমার অংশগ্রহণ।

স্টিমিটের বন্ধুরা,

"আসসালামু আলাইকুম" আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি। আজকে আমি স্টিম ফর বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত সুপারহিরো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এই কমিউনিটিতে সুপারহিরো কনটেস্ট বা এরকম একটি চমৎকার ও ইউনিক কনটেস্টে এই প্রথম অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।

20221214_161722_0000.png
ক্যানভা দিয়ে তৈরি

এরকম একটি ইউনিক কনটেস্টের আয়োজন করার জন্য স্টিম ফর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে আমার অভিনন্দন। আসলেই কমিউনিটির যারা দায়িত্বে রয়েছেন সবাই অনেক দায়িত্বশীল এবং সেই সাথে এই কমিউনিটিকে দিন দিন উত্তরোত্তর উন্নতির লক্ষ্যে অনেক কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং সেই কঠোর পরিশ্রমেরই মাঝে তারা অনেক চিন্তা ভাবনা করে এরকম একটি ইউনিক কনটেস্টের আয়োজন করেছেন যাতে আমি সত্যি অনেক মুগ্ধ। তবে এই চমৎকার কনটেস্টের মাধ্যমে আমরা আমাদের অনেকেরই সুপার হিরো কে তার সম্পর্কে জানতে পারবো। তাই আপনারা চেষ্টা করবেন সুপারহিরো কনটেস্টে প্রত্যেকটা পোস্ট পড়ার জন্য ইনশাআল্লাহ আমিও চেষ্টা করব।

pexels-photo-9345612.jpeg
উৎস

আমার মতে সুপারহিরো হল বাস্তব বা কল্পকাহিনীতে সকলের কাছে পরিচিত একটি চরিত্র। যার মধ্যে রয়েছে অসীম সৎ সাহস, দায়িত্বশীল ও কর্মঠ যা দিয়ে তিনি যে কোন অন্যায়ের মুখোমুখি হতে পারে ও ও যে কত কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে পারে এবং তার মাধ্যমে এই সমাজ এই দেশের মানুষ উপকৃত হয়। মূলত বলতে গেলে যারা এ সমাজকে এই দেশকে ধ্বংস করতে চায় সে রকম ভিলেইনদেরকে প্রতিহত করে মানুষকে এবং দেশকে রক্ষা করে থাকে। আমি মনে করি আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা পরিবারে এরকম কিছু সুপারহিরো রয়েছে যাদের মাধ্যমে সেই পরিবারটা খুব সুন্দর ও সকল প্রকার বিপদ-আপদ এবং সেই পরিবারটাকে শত দুঃখ কষ্টের মাঝে আঁকড়ে ধরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

আমি আজকে সেরকমই একজন বাস্তব সুপারহিরোকে নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি আর সেই সুপারহিরো হচ্ছে আমার বাবা। বাবা হচ্ছে এমন একজন সুপারহিরো যে শত দুঃখ কষ্টে তার সন্তান পরিবার-পরিজন সবাইকে আকড়ে ধরে এই জীবন যুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যায়। নিজে না খেয়ে অনেক দুঃখ কষ্ট করে সকলের মুখে হাসি ফোটায় এরাই হচ্ছে বাস্তবের সুপার হিরো।

pexels-photo-3932772.jpeg
উৎস

আমার বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। বাবার জন্ম ১৯৫৩ সালে এবং বাবার মুখ থেকে শোনা বাবা ১৯৬৭ বা ১৯৬৮ সালে মেট্রিক পাশ করেছিল তখনকার সময় এই ম্যাট্রিক পাশের অনেক মূল্য ছিল এবং আমাদের বাড়িতে ধরতে গেলে বাবাই ছিল একমাত্র শিক্ষিত ম্যাট্রিক পাস করা একজন লোক। আর এই জন্যেই সবাই বাবাকে মাস্টার বলে ডাকত। এবং সেই সাথে পুরো বাড়ির সবাই তাকে অনেক সম্মান করতো ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখতো। যেকোনো পরামর্শ, এছাড়াও পুরো এলাকার যে কোন ভাল মন্দ বিচার সালিশে বাবাকে ডাকা হতো। যদিও বাবা সেভাবে সময় দিতে পারতো না কারণ তিনি অনেক দূরে একটি বাজারে ব্যবসা করতেন। এই ব্যবসার জন্য তিনি অনেক সময় বাড়িতেও আসতে পারতেন না, অনেক দূরে থাকার কারণে। আর তখনকার যাতায়াত ব্যবস্থা এত ভালো ছিল না ঐখান থেকে আসতে গেলেও অনেকটা পথ হেঁটে আসতে হবে আর যদি রিক্সা বা অন্য কোন যানবাহন পাওয়া যেত তাও অনেক ভাড়া দিয়ে আসতে হতো। সে সময় টাকা-পয়সার কিছুটা সমস্যা ছিল।

pexels-photo-286625.jpeg
উৎস

আমি যখন বুঝতে শিখেছি তখন আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। আমার দাদা দুই বিয়ে করেছিলেন আমরা আমাদের দাদিকে কখনো দেখিনি তবে দাদার প্রথম ঘরের সন্তানই ছিল দুইজন আমার বাবা আর আমার একজন ফুফু। কিন্তু দাদার পরের সন্তান ছিল তিনজন তারা সবাই অনেক ছোট ছিল। সেই সাথে আমরা ভাই বোন ছিলাম আট জন। তবুও সবাই একসাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছিল। যদিও বাবার অনেক কষ্ট হয়ে যেত এই পুরো সংসারটা পরিচালনা করার দাদা মারা যাওয়ার পর। এত বড় সংসারটাকে বাবা অনেক কষ্টে যুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন আজ আমরা ভাই বোন সবাই মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে আমার বাবার দক্ষতা আত্মবিশ্বাস ও বিচক্ষণতার কারণে। এখনো সেসব দিনগুলোর কথা চোখের সামনে স্পষ্ট ভাবে ভেসে বেড়ায় আসলে লিখতে গেলে অনেক কিছুই লেখা যাবে যা। আর এই লেখা দিয়ে সেই দিনের বাবার অবদানের বিষয়গুলোকে শেষ করতে পারবো না। সেই আনন্দমুখর হাসি নিয়ে বাবার আঙ্গুল ধরে বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে কান্না কান্না ভরা কন্ঠে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো অব্দি এত স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলো রয়েছে যা সত্যি কখনোই ভুলার নয়।

1000004263.jpg
আমার বাবার পুরনো একটা ছবি

তবে বাবার আদর আমার জন্য ছিল ভিন্নরকম, যেমন ৮ ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ কিন্তু সবার চাইতে আমি কিছুটা হ্যাংলা ছিলাম খাওয়া-দাওয়া খুব একটা তেমন করতে চাইতাম না। আর এই জন্যই বাবা আমার দিকে সব সময় আলাদাভাবে নজর রাখতেন। যখন বাবা বাড়ি আসতেন যদি টাকা থাকতো সামর্থ্য অনুযায়ী সবার জন্য কিছু না কিছু আনতো তবে তার মধ্য থেকেও আমার জন্য ছিল স্পেশাল একটা বেশি। আর যদি টাকা না থাকতো সবার জন্য না আনলেও আমার জন্য আনত এবং আমাকে আলাদা করে সবার চক্ষু আড়ালে সেটা দিয়ে বলতো কাউকে দেখাবি না চুপিচুপি খেয়ে নে। আর এই জন্য এসব দেখতে চাই বিশ্লেষণ করে আমি যা খুজে পেয়েছি সেটা হল বাবাই আমার জীবনের সুপারহিরো।

সেই দিনগুলো মনে পড়লে আজও বাবার জন্য কান্না আসে। এজন্যই কান্না আসে যে আজ এই পৃথিবীতে আমরা সবাই বেঁচে আছি শুধু আমার বাবা বেঁচে নেই। তাই সবাইকে অনুরোধ করব আমার বাবার মার জন্য সবাই দোয়া করবেন। সেই সাথে আমার এবং আমার পরিবারের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের সবার জন্য সবাই বাবা মার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যাতে সবাইকে নেক হায়াত দান করে এবং সেই সাথে সবাইকে সহিসালামতে সুস্থভাবে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করে, আমিন।

ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার সুপারহিরো বাস্তবগল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদান্তে
@sanuu

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
7 Comments