আমি শ্বশুর বাড়ি আসার পরে সবচেয়ে একটি বিষয় আমাকে মুগ্ধ করেছে সব সময়।সেটি হলো আমার প্রিয় মানুষটি সব সময় অন্যকে আনন্দিত করতে ভালো বাসে।এই যেমন ধরুন, আমার চাচা শ্বশুর পুলিশের চাকরি করতেন।সে রিটায়ার্ড করে যেদিন বাসায় এসেছে।সেইদিন আমার হাসবেন্ড তার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পেরেছে তাই দিয়ে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছে।আমার একমাত্র ননদ সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা, তার মনোবল আরো দৃঢ করার জন্য।তার পূর্বের রেজাল্ট নিয়ে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছে।
আশে পাশে কার বিবাহ বার্ষিকী, কার বাথ ডে, সেই খেয়াল সে সর্বদা নিয়ে থাকে।এই সব করে সে যে আনন্দ পায়।সেটা আমি খুব ভালো করেই অনুভব করতে পারি।
হটাৎ করেই আমার হাসবেন্ড এর মাস্টার্স এর রেজাল্ট দিয়েছে।আমার মনে হলো ওর জন্য আমার কিছু করা উচিত। যে মানুষটা সবসময় অন্যের কথা ভাবে।কিন্তু তার কথা কেউ ভাবে না।তাকে যদি একটু আনন্দ দিতে পারি। সেই আকাংঙ্খা থেকেই সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র।।
কি ভাবছেন? এটি আবার কিসের ডে সেলিবেট করছি? বাংলাদেশের প্রায় সবার জানামতে একাডেমিক পড়াশোনা আছে, মাস্টার্স পর্যন্ত। এর পরে আছে এমফিল ও পিএসডি। এটি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার হাতে গোনা কিছু মানুষ এই ডিগ্রী নিয়ে থাকে। যাইহোক আমার হাসবেন্ড এর ও আজকে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষের জানা একটি বিষয় মাস্টার্স এর রেজাল্ট দিয়েছে। সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট পেয়েছে।
আর এই মাস্টার্সের রেজাল্ট এর মাধ্যমেই তার একাডেমিক পড়াশোনা জীবনের মুক্তি।
রেজাল্ট জানবার সাথে সাথেই আমাকে কল করে জানিয়েছে শিরিনা আমার রেজাল্ট দিয়েছে মাস্টার্স এর। রেজাল্ট শুনে আলহামদুলিল্লাহ আমি খুবই খুশি। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার পাগলটার জন্য কিছু করা দরকার।তাকে কিছু না জানিয়েই আমার ননদকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম তার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে।
আমার হাসবেন্ডকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আমার শ্বাশুড়ি। আমার শ্বাশুড়ির জন্য ফুল নিয়ে এসেছিলাম আমি।যাতে করে সে আমার হাসবেন্ডকে একটু হলেও আনন্দ দিতে পারে।
এই বাড়ির একটি বিষয় আমার খুবই পছন্দ।আর সেটি হলো সবার সাথে সবার পারিবারিক বন্ধন।সবাইকে যেকোনো পরিস্থিতিতে ডাকলেই পাশে পাওয়া যায় সর্বদা।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।আমার চাচা শ্বশুর ২ জন,চাচি শ্বাশুড়ি, ভাসুর, দেবর,ননদ,মামা শ্বশুড় সবাই এসেছে।আমি তাদের একটি কল করে বলেছিলা।আসতে হবে।তাই সবাই সবার ব্যস্ততা রেখে চলে এসেছে।
এই হলো আমার দেবর।ছোট হলে কি হবে সে খুব পাকা কথা বলে। সে আমাকে ফুল দিয়ে বলে শিরিনা ভাবি আমি আপনাকে আই লাভ ইউ করি।সবাই খুবই অবাক। আমাকে রেখে সে কিছুই খায় না।ওর বাবা যদি ওকে একটি চকলেট কিনে দেয়।তবে বলে শিরিনা ভাবির চকলেট ও কিনে দাও।এমন অনেক ঘটনা আছে তাকে নিয়ে।সেও তার ভাইয়াকে ফুল দিবে বলে বায়না ধরেছে।তাই সে তার ভাইয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
এই হলো আমার আর এক পাকা ননদ।এতোই প্রশ্ন করে সে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি হিমসিম খেয়ে যাই। তার কিছু নমুনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।এই ধরুন হঠাৎ করেই সে বলে উঠবে ভাবি আপনি চুড়ি কেন পরেন না?আপনার তো বিয়ে হয়েছে।রাজ ভাইয়া আপনাকে কি কি সোনার দিয়েছে?আপনি আপনার শ্বাশুড়িকে আম্মু কেন বলেন? তাকে তো শ্বাশুড়ি বলবেন।।আরো অনেক কিছু।ও বাসায় আসলে আমি ঘুম না থাকলেও আমার ঘুমের ভান করে পরে থাকতে হয়।যাই হোক সে তার ভাইয়াকে চকলেট বিস্কুট দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
এবার আমার পালা,,সবাই বলছে এবার বউমা যাও আমার ছেলের পাশে গিয়ে দাড়াও।একটি ছবি তুলি।আমি তাকে একটি ফুলের স্টিক আর একটি র্যাপিং করা ছোট বক্স উপহার দিলাম।সবাই উপহারের বক্স এ কি আছে দেখবে বলে জোর করছে।বেশি করছে আমার দেবর আর ননদরা।যাইহোক সিদ্ধান্ত হলো কেক কেটে গিফট বক্স খোলা হবে।।।
অবশেষে সেই মাহিন্দ্র ক্ষন।বাচ্চারা সবাই অপেক্ষা করছলো কখন কেক খাবে।এই হলো আমার মেঝো মামা শ্বশুর। খুবই ভালো মানুষ তিনি।সে কেমন মানুষ ছোট একটা গল্প বলি এতেই বুঝতে পারবেন।আমার হাসবেন্ড তাদের একমাত্র ভাগিনা। আমার হাসবেন্ড গরুর দুধ খাবে। তাই মেঝো মামা শ্বশুর আমার হাসবেন্ড এর জন্য একটি গরু কিনেই নিয়ে এসেছিলেন।যাইহোক মামা কেক কেটে ওর মুখে তুলে দিলো।তার পর সবার কেক খাওয়ার সমাপ্তি ঘটলে। এবার সবাই বলছে গিফট বক্স খুলতে।
সবার অতি আগ্রহের অবসান ঘটলো এই বইয়ের মাধ্যমে।আমার হাসবেন্ড বই পড়তে খুব পছন্দ করে। তাই তাকে বিশিষ্ট লেখক আহমেদ ছফার দুটি বই উপহার দিলাম।সে খুবই খুশি। তার মুখে এই খুশির হাসিটুকু দেখবার জন্যই এতো আয়োজন।
আমার মতে বই পৃথিবির শ্রেষ্ঠ উপহার।বই মানুষকে জ্ঞানী করে তুলে।বই মানুষের জ্ঞানকে প্রসারিত করে।সুখ দু:খে একমাত্র বই সঙ্গি হয়ে থাকে।বই কখনো প্রতারণা করে না।
তাই বেশি করে বই পড়ুন আর আপনার প্রিয় মানুষটিকে বই উপহার দিন।আজ আর নয়।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ সবাইকে আমার পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। ☺️
শুভেচছায়,,
@sirinaa02