ধনসম্পদ কখনোই মানুষকে সুখী করতে পারে না!(Wealth can never make people happy )

1000093275.jpgedit pixllabe

Image source

আমরা আমাদের জীবনে ধন-সম্পদের জন্য অনেক কান্নাকাটি করি। বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে থাকি। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদেরকে অনেক ধন-সম্পদের মালিক করেন। তাহলে আমরা এ পৃথিবীতে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবো। কিন্তু আমরা কখনো এটা ভেবে দেখি না। যারা অনেক হাজার হাজার টাকার মালিক, তারা কি আদৌও সুখে আছে, নাকি তাদের জীবনটা কষ্টে ভরা।

আমাদের গ্রামে আমি নাম প্রকাশ করছি না, একজন কাকা আছেন। উনি কঠোর পরিশ্রম করে অনেক টাকা কামিয়েছে এটা উনার মুখের কথা। কিন্তু আমাদের গ্রামের মানুষ বলে উনি নাকি অসৎ উপায়ে এসব টাকা উপার্জন করেছে। সত্য মিথ্যা একমাত্র আল্লাহ তাআলা জানে, উনার দুইটা মেয়ে এবং তিনটা ছেলে।

child-5033381_1280.jpg

Image source

উনি ওনার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। উনার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে উনাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। যখন বৃদ্ধ বয়সে উনি ওনার বাবা-মাকে গ্রামে রেখে নিজের ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করানোর জন্য, ভালো একটা জীবন দেয়ার জন্য। ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়। তখন তিনি আর তার বাবা-মায়ের কথা মনে করতেন না।

আমাদের গ্রামের মানুষের মুখে আমি শুনেছি, তার বাবা মা কত কষ্ট করেছে, এই বৃদ্ধ বয়সে। কিন্তু তাদের ছেলে একটা বার এসে দেখেনি তারা আদৌ ভালো আছে কিনা। পাঁচ মাস ছয় মাস পরে ৫০০০ টাকা দিত তাদেরকে। এরকম করাতে তার বাবা তাকে বারণ করে দিয়েছিল।তাদেরকে টাকা না দেয়ার জন্য। কারণ পাঁচ মাস পরে যখন ৫০০০ টাকা দিত সেটা দিয়ে তারা কি খাবার খাবে? নাকি তাদের দুইজন অসুস্থ মানুষ, ঔষধ কিনবে।

তার বাবা এই কথা বলার পর থেকে তিনি তাদেরকে আর টাকা দেয়নি, খোঁজখবর নেয়নি। তার বাবার অনেক সম্পদ ছিল। গ্রামের মানুষ বলেছিল আপনি আপনার সম্পদ বিক্রি করে, আপনার খাবার টাকা জোগাড় করেন, এবং আপনার ঔষধের টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু ওই বৃদ্ধ মানুষটা তাদেরকে একটা কথাই বলেছিল। এই সম্পদ গুলো আমার ছেলের কাজে আসবে। তার বাবা মারা গেল, উনি বাড়ি এসেছেন ঠিকই। কিন্তু ওনার বাবার জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

বাবাকে কোন মত মাটি দিয়ে উনি আবার ঢাকায় চলে গেছেন। ওনার নাকি বিভিন্ন ধরনের কাজ আছে, মাকে একা বাড়িতে রেখে। একটা বারের জন্য বলেননি মা তুমি চলো আমার সাথে বাবা তো এখন নেই। তুমি এখন কি খাবে কোথায় থাকবে। তার দুখিনী মা অনেক কান্না করেছে, কিন্তু তার কান্না তার ছেলের মন গলাতে পারেনি।

funeral-2511124_1280.jpg

Image source

তার বাবা মারা যাওয়া ঠিক ছয় মাস পর, ওই বৃদ্ধ মহিলাটা মারা যায়। আমাদের গ্রামের মানুষ তার ছেলেকে আর খবর দেয় না। কারন এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাটাই অনেক ভালো, গ্রামের মানুষ মনে করে। গ্রামের সবাই মিলে ওই মহিলাটাকে সুন্দরভাবে কবর দিয়ে দেয়। বাড়িটা শূন্য পড়ে থাকে, বাড়িতে অনেক গাছ ছিল ফল ফলাদি গাছ ছিল।

এরপর গ্রামের চেয়ারম্যান তাকে খবর দেয়। এবং বলে তার বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য একজন মানুষ রেখে যাওয়ার জন্য। কারণ এখন আর তো আর বাড়ি দেখাশোনা করার কেউ নেই। এটা শুনে সে ঢাকা শহর থেকে গ্রামে ছুটে আসে। এবং গ্রামে এসে জানতে পারে তার মা আরো দুই মাস আগে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। সে কিছুটা হলেও অনুতপ্ত হয়, কিন্তু তার টাকা পয়সার গরমে নিজেকে মাথা নত করতে, অস্বীকার করছিল।

এরপর সে একজন মানুষ রেখে দেয়, তার বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য। আবার ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বর্তমানে তার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চাকরিরত অবস্থায় রয়েছে। হয়তোবা বাবা-মায়ের খোঁজ মাঝে মাঝে নেয়। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তাদের খোঁজ নেয়া হয় না। এখন সেই মানুষটা বুঝতে পারে যখন তার বাবা-মা বেঁচে ছিল। আর সেই মানুষটা যখন তার বাবা-মায়ের খোঁজ নেয়নি, এটা কতটা কষ্টদায়ক।

এইতো গত মাসে লোকটা গ্রামে ফিরে এসেছে। এবং সবার কাছে এসে ক্ষমা চাইছে, তার বাবা-মায়ের কবরস্থানে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করছে যে, সে অনেক ভুল করেছে আজকে তার ভুলের মাশুল তাকে দিনের পর দিন দিতে হচ্ছে। এমন একটা রোগে সে আক্রান্ত, কোন কিছু খেতে পারে না। ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনা নিজের ইচ্ছে মত চলতে পারেনা।

তবে একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, তার কাছে কিন্তু এখনো অনেক টাকা। সে ঘুমাতে গেলে তার ঘুম আসে না। বারবার তার মায়ের কথা মনে পড়ে, তার ছেলে মেয়ে এখন আর তেমন একটা তাদের খোঁজ খবর নেয় না। এখন তারা গ্রামেই থাকে বাড়ি দেখাশোনা করে, ঢাকা শহরের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছে তার ছেলে মেয়ে এখন সেটেল হয়ে গেছে। তারা এখন আর তার খোঁজ নিবে না, যেমনটা তিনি তার বাবা-মায়ের সাথে করেছেন।

money-2298506_1280.jpg

Image source

আমাদের ধর্মে একটা কথা আছে। সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। কথাটা অনেকেই ভুলে যায়, আসলে এই কথাটা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়! আমি একটা মানুষের জন্য যতটুকু পানিতে নামব, অন্য আরেকটা মানুষ আমাকে বাঁচানোর জন্য ঠিক তার চাইতে একটু হলেও বেশি পানিতে নামার চেষ্টা করবে! বিপদ কখন আসে, সেটা হয়তোবা বলা যায় না, কিন্তু অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত।

কালকে আমার সাথে কাকার দেখা হয়েছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেমন আছেন। তখন দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে আমাকে বলল বাবা আমি মোটেও ভালো নেই। আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে কাজটা মোটেও ঠিক করিনি। আজকে দিনের পর দিন, আমাকে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে। টাকা পয়সা আসলেই মানুষকে সুখ দিতে পারে না।

উনি কথাগুলো বলছিল আর কান্না করছিল। আসলে ওনার এই কান্নার পেছনে ওনার বাবা-মায়ের অভিশাপ লুকিয়ে আছে। কারণ যে বৃদ্ধ মানুষগুলো দিনের পর দিন গ্রামের পড়ে থেকে তাদের দিন যাপন করেছে। তাদেরকে খোঁজ নেওয়ার মতো সময় ছিল না। সেই মানুষটা আজকে নিজেই তাদের মত হয়ে গেছে। আর এখান থেকেই আমি বুঝতে পারলাম, টাকা পয়সা কখনোই মানুষকে সুখী করে তুলতে পারে না। আপনার যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ইনকাম করুন। কিন্তু সেটা পরিবারের সাথে থেকে পরিবারকে ভালোবেসে। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।

meraindia

কমিউনিটির জন্য ১০% বেনিফিশিয়ারি


png_20230827_214431_0000.png


The official accounts of the Incredible India community

Discord | Twitter | Telegram | Instagram


Htq.gif


20230831_233618_0000.png

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
6 Comments